কুরআন এবং আপনি – তারিক মেহান্না (পর্ব ১৫)

সূরা আলে ইমরানের ১৩৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আর যারা কোনো পাপ কাজ করার পর বা নিজেদের উপর যুলুম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ ব্যতীত আর কে আছে তাদের ক্ষমাকারী?

 

সাধারণভাবে, তাওবাহ (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও ইস্তিগফারের (অনুশোচনা) সাথে বিষণ্ণতা ও অনুতাপের অনুভূতিগুলো জড়িত। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর কাছে বান্দার তাওবাহ গৃহীত হওয়ার প্রথম শর্তই হল উক্ত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া ও অনুশোচনা করা। আপনি ইবন আল-জাওযীর বইগুলো পড়লে কিছু কথা ঘুরেফিরে বারবার দেখতে পাবেন। তা হল ‘অনুতাপের অশ্রু’ এবং ‘অনুশোচনার অশ্রু দ্বারা নিজের পাপমোচন’। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিজেকে বা অন্য কাউকে আল্লাহর অবাধ্যতায় পতিত হতে দেখলে আমাদের তাতে দুঃখ পাওয়া উচিত।

কিন্তু আমি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের দিকে নির্দেশ করতে চাই। তা হল, আপনি কোনো পাপকাজে লিপ্ত হওয়ার পর যখন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উদ্যত হন সেই মুহূর্তে আপনার দুঃখবোধ আনন্দের অনুভূতি দ্বারা পরিবর্তিত হওয়া উচিত। হ্যাঁ, মু’মিনের হৃদয় আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে অবশ্যই দুঃখে ভারাক্রান্ত হবে। কেননা পাপে লিপ্ত হওয়া হচ্ছে একটি খাঁচায় বন্দী হবার মত। আর সেই পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত বোধ করা এবং আল্লাহর কাছে সেজন্য ক্ষমা চাওয়া হল সেই খাঁচার দরজা খুলে মুক্ত হওয়ার চাবি। ভেবে দেখুন আপনি যখন কোনো খাঁচা থেকে মুক্তি লাভ করবেন তখন আপনার স্বাভাবিক অনুভূতিটি হবে আনন্দ এবং সুখমিশ্রিত। কোনো কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সময় কেউ দুঃখ বোধ করে না। কাজেই, তাওবাহ এবং ইস্তিগফারের পর আপনার স্বাভাবিক অনুভূতি হওয়া উচিত মুক্তির আনন্দমিশ্রিত। পাপকর্মের দুঃখে অনুতপ্ত হবেন কিন্তু পাপ কাজের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও অনুশোচনা যেন আপনার মাঝে মুক্তির বোধ তৈরি করে।

প্রকৃতপক্ষে, পাপকাজের জন্য আপনার অনুশোচনা অন্য কারো জন্য নয় বরং স্বয়ং আল্লাহর জন্য আনন্দের এক উপলক্ষ। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

 

 

মনে কর, তুমি মরুভূমির মধ্য দিয়ে যাচ্ছ, এমতাবস্থায় তোমার খাদ্য-পানীয়সহ তোমার উটটি হারিয়ে গেল, তুমি সেটিকে ফিরে পাবার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়ে একটি গাছের ছায়ায় বসে আছ। হঠাৎ তোমার উটটিকে তুমি তোমার সামনে দেখলে পেলে! এই অবস্থায় তুমি যতটা না খুশী হবে, তুমি কোনো পাপ করে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হলে তিনি তার থেকে বেশী খুশী হন।’

সুতরাং, মহান ক্ষমাশীল আল্লাহ যেখানে আপনার অনুশোচনায় খুশী হন, সেখানে যাকে ক্ষমা করা হচ্ছে সেই আপনার তো তাওবাহ করার পর আনন্দিতই হওয়া উচিত।

তাই তাওবাহ এবং ইস্তিগফার আমাদের জীবনে আকাঙ্খিত বিষয় হওয়া উচিত। সেই সাথে সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাওবাহ ও ইস্তিগফার করুন মুক্তির আনন্দে।

 

তারিক মেহান্না
পলিমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেসন ইউনিট- সেল#১০৮।