কুরআন এবং আপনি – তারিক মেহান্না (পর্ব ২২)

আল্লাহ তা’আলা কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৮৬ নং আয়াতে বলছেন,

নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে তোমাদের সম্পদ ও জীবনের দ্বারা …”

 

 

কিছু লোকের জন্য এই পরীক্ষা হতে পারে দারিদ্র্য; কারো জন্য হতে পারে মারাত্মক কোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা। আবার কিছু মানুষের জন্য তা হতে পারে ভালোবাসার মানুষকে হারানো। কারও জন্য বা বন্দীদশা। তবে আমাদের প্রত্যেকের জন্যই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে এটা একটা প্রতিশ্রুতি যে, তিনি আমাদের সবাইকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে, কোনো একধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি অবশ্যই করবেন। আপনি নবীতুল্য এক সৎকর্মশীল ব্যক্তিত্ব হোন কিংবা একজন খুনীর মতন ঘৃণ্য কেউ হোন, আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দুঃখ-কষ্ট এবং পরীক্ষা নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত নবীগণ যে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তা ভালো করে খেয়াল করলে আপনার কাছে মনে হবে যেন আল্লাহতা’আলা আগে থেকেই আপনার আমার জন্য এই জিনিসগুলোকে উদাহরণ হিসেবে রেখে দিয়েছেন। যেন আমরা আমাদের সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারি:

 

  • আদম (আলাইহিস সালাম) এর এক পুত্র আরেক পুত্রকে হত্যা করেছিল।

 

  • নূহ (আলাইহিস সালাম) এর এক পুত্র ছিল কাফির।পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছিল।

 

  • ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর বাবা ছিল এক অত্যাচারী মুশরিক।

 

  • ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল।

 

  • আইয়্যুব (আলাইহিস সালাম) কে সম্মুখীন হতে হয়েছিল মারাত্নক ধরনের সব অসুখের।

 

  • ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) দুইবার সাময়িকভাবে পুত্রহারা হয়েছিলেন (একবার ইউসুফ(আলাইহিস সালাম), আরেকবার বিন ইয়ামিন)।

 

  • রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দারিদ্র্যের সম্মুখীন হন। তাঁর জীবন একাধিক বার বিপন্ন হয়। তিনি তাঁর শিশু সন্তানদেরকে হারান, প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে হারান, প্রাণপ্রিয় চাচা তাঁকে ছেড়ে চলে যান পরপারে। এমনকি তার নিজের জন্মভূমি থেকে তিনি হয়েছিলেন বিতাড়িত।

 

তাই বলা চলে এখনকার দিনে আমরা যে সমস্যা গুলোর মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে এমন একটি সমস্যাও নেই যেগুলো পূর্ববর্তী কোনো নবী-রাসূল মোকাবিলা করেননি। এর অনেকগুলো উপকারিতা আছে, যেমন:

  • আমাদের কাছে প্রত্যেকটি কষ্টকর পরীক্ষার নীলনকশা রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত দিক নির্দেশনা।

 

  • আল্লাহতা’আলার সবচাইতে প্রিয় বান্দাদেরকে এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হবার ঘটনা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে এই সকল বিপদময় পরিস্থিতির মোকাবিলা মানুষকে পূর্ণতা দান করে।
  • আল্লাহ যেখানে প্রিয় বান্দা অর্থাৎ নবী-রাসূলদেরকেই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করেন, তাই আপনিও যদি তেমন কঠিন কোনো পরীক্ষায় পতিত হন তাহলে একথা বলার অবকাশ নেই, “আমি-ই কেন?” কারণ আপনার থেকেও অধিক প্রিয় বান্দাদেরকেও আল্লাহ এরচেয়ে কঠিনভাবে পরীক্ষা করেছেন।

 

  • নবীদের সাথে আমাদের অন্তত একটা দিকে সাদৃশ্য অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

 

  • যখন আমরা নিজেরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবো তখন নবীদের কষ্ট-ত্যাগ ইত্যাদি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। কারণ তারা আরো বৃহৎ পরিসরে এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ফলে আল্লাহতা’আলার নবী -রাসূলদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।

 

  • আল্লাহতা’আলার উপর আপনার ভরসা আকাশচুম্বী হবে যখন আপনি জানতে পারবেন যে, নবীদের কঠিন বিপদের সময় আল্লাহ তা’আলা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি আপনাকেও সাহায্য করবেন যদি আপনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেন।

 

  • এমনকি নবীরাও আল্লাহতা’আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার উর্ধ্বে নন-এই সত্যটি সমগ্র সৃষ্টির উপর আল্লাহতা’আলার একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়টিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলে।

 

কাজেই এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার যে ওয়াদা করেছেন তা আমাদের কাছে অপছন্দনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু এই অনিবার্য পরীক্ষা থেকে আমাদের অনেক কিছু অর্জন করার আছে। তবে সেজন্য আমাদের পরীক্ষাগুলোকে আল্লাহর নবীদের উপর আমাদের বিশ্বাসের সাথে সমন্বিত করতে হবে।

 

তারিক মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট – সেল #১০৮