সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ

১৪৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখে জন্মগ্রহন করেন সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ। তিনি ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের ছেলে। তার মাতার নাম মুকরিম খাতুন৷ ১৪৮১ সালে তার বাবা সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ ইন্তেকাল করেন। সুলতানের বড় ছেলে হিসেবে শাসনক্ষমতা লাভ করেন দ্বিতীয় বায়েজীদ৷ ঐতিহাসিকদের মতে, তিনিই খেলাফতের অধিকতর যোগ্য হকদার ছিলেন৷ কিন্তু তার কনিষ্ঠ ভাই শেহজাদ জেম সুলতান বায়েজীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন৷ এবং তিনি মিশরের শাসকদের কাছে সুলতানের বিরুদ্ধে সহায়তা কামনা করেন৷ তবে সুলতান অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সকল চক্রান্ত সামলে উঠেন। ব্যর্থ হয়ে শেহজাদ জেম রোডসের নাইটদের কাছে আশ্রয় নেন৷ নাইটরা তাকে পোপ অষ্টম ইনোসেন্টের কাছে সোপর্দ করে৷ পোপের তুর্কীদেরকে ইউরোপ থেকে চিরদিনের বিতাড়িত করতে শেহজাদ জেমকে ব্যবহার করতে শুরু করে৷ সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ পোপের এই চক্রান্তকেও ব্যর্থ করে দেন।

বায়েজীদ তার পিতার আদর্শে দীক্ষিত ছিলেন৷ তৎকালীন সময়ে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। খেলাফতের আয়ত্বাধীন অঞ্চলগুলির ভেতরে তার শাসনামলে স্বাধীন মত প্রকাশ ও ভিন্নমতের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। ফলে তিনি সকলের কাছেই ন্যায়পরায়ণ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
সুলতান বায়েজীদ তার শাসনামলে উসমানীয় খেলাফতের শক্তিবৃদ্ধির পেছনে পরিশ্রম করেন৷ এবং তা কার্যকর সফলতার মুখ দেখতে পায়। ১৫ শতকের শেষের দিকে তিনি মোরিয়ার ভেনিসিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১৫০১ সালে যুদ্ধ শেষ হয় এবং বায়েজীদ সমগ্র পেলোপোনিসের নিয়ন্ত্রন লাভ করেন৷

সুলতানের জীবনের সবচেয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত ঘটনা হচ্ছেন স্পেনের ইহুদী ও মুসলিম উদ্বাস্তুদের আশ্রয় প্রদান। ১৪৯২ সালের জুলাই মাসে স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের সময় স্পেনের মুসলিম ও ইহুদিদের বহিষ্কার করা হয়। সেই বছর বহিষ্কৃতদের নিরাপদে উসমানীয় সাম্রাজ্যে আনার জন্য এডমিরাল কামাল রইসের নেতৃত্বে বায়েজীদ স্পেনের সমুদ্র বন্দরে উসমানীয় জাহাজ পাঠান। তিনি উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর জন্য সাম্রাজ্য জুড়ে ঘোষণা দেন। উদ্বাস্তুরা উসমানীয় সাম্রাজ্যে বসবাসের অনুমতি পায়।

স্পেন থেকে যাদেরকে বহিস্কার করা হয়েছিল তারা ছিল সাধারণ স্থানীয় স্প্যানিশদের চেয়ে দক্ষ পেশাজীবি। অভিবাসী হিসেবে তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ ও দক্ষতা ভাল ছিল৷ এমন প্রজাদের বহিষ্কার করাকে কেন্দ্র করে তিনি রাজা ফার্ডিনেন্ড ও রাণী ইসাবেলাকে নিয়ে উপহাস করে বলেছিলেন “তোমরা ফার্ডিনেন্ডকে জ্ঞানী শাসক বল, যে নিজের দেশকে দরিদ্র করে আমার দেশকে ধনী করেছে!”

সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় প্রদেশের গভর্নরদের প্রতি তিনি ফরমান জারি করে ঘোষণা দেন যে স্প্যানিশ উদ্বাস্তুদেরকে শুধু আশ্রয় দিলেই হবে না বরণ তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে হবে। আন্দালুসের মুসলিম ও ইহুদিরা উসমানীয় সাম্রাজ্যে নতুন ধ্যানধারণা, প্রক্রিয়া ও হস্তশিল্পের প্রচলন করে সাম্রাজ্যকে সমৃদ্ধ করে। ১৪৯৩ সালে সেফারডিক ইহুদিরা কনস্টান্টিনোপলে প্রথম ছাপাখানা চালু করে।

সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদের ৩১ বছরের সফল খেলাফত শেষে জীবনের দ্বারপ্রান্তে তার পুত্র শাহজাদা আহমেদ ও শাহজাদা সেলিমের মধ্যে উত্তরাধিকারের লড়াই শুরু হয়। আহমেদ কারামান শহর অধিকার করে কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হন। সেলিম থ্রেসে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত করেন কিন্তু বায়েজীদ তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। ফলে সেলিম ক্রিমিয়া উপদ্বীপে পালিয়ে যান।

সেলিম ক্রিমিয়া থেকে ইয়ানিসারিদের সমর্থনে বায়েজীদকে সিংহাসন ত্যাগে বাধ্য করেন। বায়েজীদ দেমোতিকায় অবসর জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌছানোর পূর্বে ১৫১২ সালের ২৬ মে ইন্তেকাল করেন। তাকে ইস্তানবুলের বায়েজীদ মসজিদের পাশে দাফন করা হয়


কাজী মাহবুবুর রহমান 
মূলঃ fateh24