১০ম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – ট্রিলিয়ন ডলার সাদাকা – শায়খ আতিক উল্লাহ


ট্রিলিয়ন ডলার সাদাকা

যাহ, কেউ এত টাকা সাদাকা করতে পারে? কেন পারবে না? হিম্মত থাকলে ‘ট্রিলিয়ন’ ফ্রিলিয়ন কিছুই না। আর সত্যি কথা বলতে কি, এই ‘সাদাকা’ আমি-তুমি-আপনি-সে-তিনি সবার পক্ষেই সম্ভব। এবং প্রতিদিনই সম্ভব। এজন্য ফুটো পয়সাও লাগবে না। ইয়া আল্লাহ! কিভাবে কিভাবে? বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?

আল্লাহর নেয়ামতের সংখ্যা কতো? কেউ হিশেব করে বলতে পারবে না। পৃথিবীর সব কম্পিউটার মিলেও গুণে শেষ করতে পারবে না। কুরআনেই এটা ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে:
وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لاَ تُحْصُوهَا
যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করো, গুণে শেষ করতে পারবে না (নাহল: ১৮)।

আমরা অসীম নেয়ামতের সাগরে ডুবে আছি। চারদিকে শুধু নেয়ামত আর নেয়ামত। আমাদের করণীয় কী? প্রতিটি নেয়ামতের জন্যে শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। কিন্তু এত নেয়ামতের শুকরিয়া কিভাবে আদায় করবো? এ যে কঠিন এক কাজ! বলা ভাল অসম্ভব!

তাহলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো? না, তা হতে যাবে কেন? আমাদের পেয়ারা নবীজি সা. আছেন না! তিনি আমাদের জন্যে কোনও অসম্পূর্ণতাই রেখে যান নি:
يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى
প্রতিদিন সকালে, শরীরের প্রতিটি অস্থিসন্ধি (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ)-এর জন্যে ‘সাদাকা’ দিতে হয়!
(-শরীরে অসংখ্য ‘অস্থিসন্ধি’ আছে! এত সাদাকা কিভাবে দেবো?
-চিন্তার কিছু নেই। সাদাকা শুধু টাকা দিয়েই দিতে হয় এমন নয়)
= প্রতিটি তাসবীহ একটি সাদাকাহ।
প্রতিটি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ একটি সাদাকা।
প্রতিটি ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ একটি সাদাকা।
প্রতিটি ‘আল্লাহু আকবার’ একটি সাদাকা।
সৎকাজের আদেশ একটি সাদাকাহ।
অসৎ কাজে বাধাদান একটি সাদাকাহ।
(আরো সহজ হলো) এই কাজগুলোর কোনওটা না করলেও, সকালে শুধু দুই রাকাত সালাত আদায় করলেই, যথেষ্ট হয়ে যাবে! (মুসলিম)!

আল্লাহু আকবার! আমার পেয়ারা নবীজি আর কতো সহজ করে দিবেন? আল্লাহর পক্ষ থেকে আমরা এত্ত সুন্দর একটা ‘শরীর’ পেয়েছি। শরীরের প্রতিটি অংশের জন্যেই আলাদা আলাদা শোকর আদায় করা দরকার। সাদাকা আদায় করা দরকার!

সাদাকা দেয়াটা বিবেকের দায়ও বটে। এতবড় নেয়ামত এমনি এমনি ভোগ করবো! কিন্তু নেয়ামতের বিনিময়ে নিজের করনীয় ভাবতে গেলে তো মাথাই ঘুরে ওঠে! বাপরে, তাহলে সারাদিন সব কাজ ফেলে ‘জায়ানামাজ’ নিয়ে বসে যেতে হবে যে। কয়েক হাজার দানাবিশিষ্ট ইয়া লম্বা তাসবীহ জপতে জপতে গলা শুকিয়ে ফেলতে হবে। না, এসবের কিছুই করতে হবে না। শুধু সূর্য ওঠার পনের মিনিট পর, মাত্র দুইটা রাকাত ‘সালাতুত দু‘হা’ পড়ে নিলেই হলো। ব্যস নিশ্চিন্ত। অসংখ্য বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ‘গোল্ড দীনার’ সাদাকা করার চেয়েও বেশি কিছু, এক নিমিষে হয়ে যাবে! সাদাকা করার টাকা কই, এ-প্রশ্ন নিয়ে হাহুতাশ করতে হবে না।

নবীজি সব সময় এই নামাযের প্রতি তাকিদ দিতেন। সাহাবীগনকে পইপই করে বলতেন। আবুদ্দারদা রা. বলেছেন:
أَوْصَانِي حَبِيبِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ، لَنْ أَدَعَهُنَّ مَا عِشْتُ: “بِصِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَبِأَنْ لاَ أَنَامَ حَتَّى أُوتِرَ
আমার হাবীব আমাকে তিনটা কাজ করার ওসীয়ত করেছেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, কিছুতেই আমলগুলো ছাড়বো না!
১.প্রতি মাসে তিনদিন রোজা রাখা।
২. দুইরাকাত সালাতুত দুুু‘আ বা ইশরাকের নামাজ পড়া।
৩. শোয়ার আগে বিতির পড়ে নেয়া। (মুসলিম)

সময়? সূর্য ওঠার দশ বা পনের মিনিট পর থেকে শুরু করে, জোহরের সময় শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগ পর্যন্ত!
সংখ্যা? দুই রাকাত হতে পারে। চার রাকাত হতে পারে। আট রাকাতও হতে পারে। আলোচ্য হাদীসে অবশ্য স্রেফ দুই রাকাতের কথাই এসেছে।

অাচ্ছা, প্রতিদিন না পারলেও, মাঝেমধ্যে কি সম্ভব নয়? কতক্ষণই বা সময় লাগবে, এই তিন কি চার মিনিট? সময়টা খুব বেশি? অর্জন যে কল্পনাতীত!