৫০তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – জাযা-কাল্লাহু খাইরান – শায়খ আতিক উল্লাহ


জাযা-কাল্লাহু খাইরান

আমাদের ইসলামে দুই ধরনের ‘ইবাদত’ আছে। কিছু আছে আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল আমাদের জন্যে আবশ্যক করে দিয়ে গেছেন। সেগুলো আদায় করতেই হয়, নইলে গুনাহ হয়। পরকালে শাস্তির ভয় থাকে। আর কিছু আমল আছে, করলে সওয়াব না করলে গুনাহ নেই।
ধড়পাকড় না থাকলেও, ঐচ্ছিক আমলগুলোর শক্তি ও উপকারিতাও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। ক্ষেত্রবিশেষে ‘নফল’ আমলগুলোর তাৎক্ষণিক ফলাফল বেশিই দেখা যায়। তার মানে এটা বোঝাতে চাচ্ছি না, ফরযের চেয়ে নফলের গুরুত্ব বেশি! নফলের ফলটা হাতেনাতে পাওয়া যায় অনেক সময়।
বেশির ভাগ ফরয ওয়াজিবের সম্পর্কই সরাসরি আল্লাহর সাথে। কিন্তু নফল ও আখলাক সম্পর্কিত ইবাদতগুলোর প্রাথমিক ও বাহিক সম্পর্ক বান্দার সাথে।

কেউ আমার প্রতি সুন্দর আচরণ করলো, আমি ন্যূনতম তার জন্যে কী করতে পারি? তার শুকরিয়া আদায় করতে পারি। ধন্যবাদ জানাতে পারি।

তার ভালো আচরণের প্রত্যুত্তরে আমি যদি চুপচাপ বসে থাকি, সেটা দেখতেও সুন্দর হয় না, সুন্নাত নয়। আমি যদি কাজটার জন্যে হাসিমুখে শুকরিয়া আদায় করি, এতে ও ভাইটা উৎসাহ পাবে। তার উপকারী মনটা আরো বেশি উপকারে উৎসাহী হবে। এটা ঠিক, খাঁটি মানুষ করো প্রতিদান বা প্রশংসার প্রত্যাশী হয়ে কিছু করে না, তবুও একটুখানি হাসি, একটুখানি স্বীকৃতি পেলে, মনের বল নিশ্চয় বেড়ে যাবে! প্রশংসা পেলে ভাল লাগা, উৎসাহ পাওয়া মানুষের জন্মগত স্বভাব। বেসামাল না হয়ে পড়লে, প্রশংসায় খুশি হওয়া খারাপ কিছু নয়।

মানুষের প্রতি শোকরগুজার থাকা সুন্নাত। নবীজি বলে গেছেন:
مَنْ لمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لمْ يَشْكُرِ اللهَ
যে মানুষের শোকর আদায় করে না, আল্লাহরও শোকর আদায় করে না (তিরমিযী)।

পেয়ারা নবী এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি, কিভাবে শোকর আদায় করতে হবে, সেটাও খুলে বলে দিয়ে গেছেন:
مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفًا فَقَالَ لِفَاعِلِهِ: جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا. فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ
যার প্রতি সুন্দর আচরণ করা হলো, (তার উত্তরে) সে বললো: জাযাকাল্লাহু খাইরান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)! যে চূড়ান্ত রকমের প্রশংসা করলো!

এরচেয়ে সুন্দর আদর্শ হতে পারে? আমাদের মধ্যে শুকরিয়া-স্বীকৃতি সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। কিন্তু অন্যদের মধ্যে ঠিকই ‘থ্যাংকিউ-সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে! বেশ ভালভাবেই গড়ে উঠেছে! আমরা কেন পিছিয়ে পড়বো! তবে সামনে থাকার জন্যে ‘থ্যাংকিউ-সংস্কৃতিতে’ আবার অভ্যস্ত হয়ে পড়বো না!
আমরা ‘সুন্নাতী-তাহযীবে’ অভ্যস্ত হয়ে উঠবো!
আমরা জাযা-কাল্লাহু খাইরান-সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবো!
আমরা রিকশাচালককে বলবো: জাযা-কাল্লাহু খাইরান!
আমরা বাড়ির খাদেমকে বলবো: জাযা-কাল্লাহু খাইরান!
আমরা বাসের হেল্পারকে বলবো: জাযা-কাল্লাহু খাইরান!
আমরা বন্ধুকে বলবো, ভাইকে বলবো, বোনকে বলবো, স্ত্রীকে বলবো, সন্তানকে বলবো, বাবা-মাকে বলবো, উস্তাদকে বলবো, ছাত্রকে বলবো, মুয়াযযিনকে বলবো:
জাযা-কাল্লাহু খাইরান!

প্রথম প্রথম লজ্জা লাগবে কিন্তু! দুয়েক দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে! ইনশাআল্লাহ!