৫৯তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – সালাতুল ইস্তিখারা – শায়খ আতিক উল্লাহ


সালাতুল ইস্তিখারা

ইস্তিখারা মানে ‘কল্যাণ চাওয়া’। সব সময়, সব বিষয়ে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়? মানুষ তো গায়েব জানে না। আগামী কাল কী হবে, সেটাও তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এমনকি নবিজী সা.-ও গায়েব জানতেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাকে গাইবের সংবাদ জানালে, তখন জানতে পারতেন। এই জানার ওপর ভিত্তি করেই প্রিয় নবীজি সা. সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। এবং সেটা শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্তই হতো।

জটিল ও সঙ্গীন মুহূর্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু কোনদিকে পা ওঠাব, ঠিক করে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়ে। পেরেশানি আর হয়রানির অন্ত থাকে না। মাঝে মধ্যে এমনও হয়: সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, ভাল করে যাচাই-বাছাই করার পর বের হয়: কাজটাতে ভালমন্দ উভয় দিকই সমান সমান! এখন কী করবো?

এ-ধরনের সমস্যার সমাধান পেয়ারা নবী দিয়ে গেছেন। খুবই সহজ একটা সমাধান। চমৎকার একটা সুন্নাত:
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُنَا الاسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا، كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: “إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ لِيَقُلْ:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي -أَوْ قَالَ: عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ- فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي -أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ- فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي”
জাবের রা. বলেছেন: নবীজি সা. আমাদেরকে সমস্ত বিষয়ে ‘ইস্তিখারাহ’ শিক্ষা দিতেন। আমাদেরকে কুরআন কারীমের সূরা যেমন গুরুত্ব দিয়ে শেখাতেন, ইস্তিখারাও হুবহু একই গুরুত্ব দিয়ে শেখাতেন। নবীজি বলতেন:
তোমরা কোনও বিষয়ে উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত হয়ে পড়লে, দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিবে। তারপর ইস্তিখারার দু‘আ পড়বে (বুখারী)।
আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে কল্যান কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে ‘শক্তি’ কামনা করছি। আপনার মহা অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কারণ আপনিই ক্ষমতাবান, আমার কোনও ক্ষমতা নেই। আপনি সব জানেন, আমি জানি না। আপনি গাইবের মহাজ্ঞানী।
ইয়া আল্লাহ! আপনার ইলমে (জানায়) যদি উক্ত বিষয়টা আমার দ্বীন-দুনিয়া-জীবিকা-পরিণতির জন্যে কল্যাণকর হয়, তাহলে সেটা আমার জন্যে নির্ধারণ করে দিন। সহজ করে দিন। তাতে বরকত দান করুন। আর যদি বিষয়টা আমার জন্যে সার্বিকভাবে অকল্যাণকর হয়, বিষয়টা আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিন। আমাকেও বিষয়টা থেকে সরিয়ে নিন। আমি যে অবস্থাতেই থাকি, আমার জন্যে কল্যাণের ফয়সালা করুন। আমাকে খুশি করে দিন।

মনে হতে পারে, বড় কোনও বিপদ বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ হলে, ইস্তিখারার নামায পড়তে হবে। এই চিন্তা সঠিক নয়। পাশাপাশি ইস্তিখারার পর, ঘুমের মধ্যে কোনও ইঙ্গিতপূর্ণ স্বপ্ন দেখাও জরুরী নয়।

হাদীসের ভাষ্যমতে, ইস্তিখারাকারী নামায আদায় করে, দু‘আটা পড়ে, কাজে নেমে পড়বে। যদি দেখে কাজটা সহজেই করা যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আর পরিস্থিতি ভিন্ন হলে, নানা প্রতিবন্ধকতা আসতে থাকলে, ক্ষান্ত দিবে।
দু‘আটা সালামের আগে নামাযের মধ্যেও পড়া যাবে। সালাম ফেরানোর পরও পড়া যাবে। এমনকি নামায পড়া ছাড়া, শুধু দু‘আটা পড়েও কাজ শুরু করা যাবে। মহিলাদের বিশেষ সময়ে নামায পড়া অসম্ভব, অথবা সফরের হালতে বা নামায পড়া যায় না, এমন হালতে থাকলে পুরুষও শুধু দু‘আ পড়ে কাজ শুরু করতে পারবে।

সুন্নাত তরীকায় ইস্তিখারা করার ভাবনাই তো কেমন শিহরন জাগানো। ভাবতেই কেমন গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে:
-আমি এখন যা করতে যাচ্ছি, সরাসরি আল্লাহ সাহায্যকারী হিশেবে আছেন। সঠিক সিদ্ধান্তটা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসছে। আর এত সহজ একটা ‘আমল’ খোদ নবীজি শিখিয়ে দিয়ে গেছেন! আর কিছু লাগে?