৭১তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – বিকিকিনি – শায়খ আতিক উল্লাহ


বিকিকিনি

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামাজিক সুসম্পর্ককে খুবই গুরুত্ব দিতেন। পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতি জোর তাকিদ দিতেন! বেচাকেনার সময় কোনও পক্ষই যাতে লাভবান হতে পারে, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখতেন।

কিছু পণ্যে সুনির্দিষ্ট বাজারদর থাকে না। ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষির পর ধার্য্য হওয়া মূল্যেই কেনাবেচা হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দরকষাকষি করতে গিয়ে অনেক সময় মনকষাকষিও হয়ে যায়। এমনটা যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি ফেরাতেই নবীজি বলে গেছেন:
رَحِمَ اللَّهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى
বেচাকেনা ও অন্যের প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে উদার-সহনশীল ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ দয়া করেন (বুখারী)

সামহ (سَمْحًا) বা উদার-সহনশীল হতে হলে, উভয় পক্ষকেই নিজের অবস্থান থেকে নেমে আসাটা জরুরী। ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকা আবশ্যক। নিজে লাভবান হয়ে, অন্যকে ঠকানোর মানসিকতা পরিহার করে চলা অপরিহার্য্য।

একই কথা মামলা-মোকাদ্দমার বেলায়ও খাটে। অন্যকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে মামলা জেতার চিন্তা করা ঠিক নয়। ইনসাফের সীমায় থেকেই অন্য ভাইকে ছাড় দেয়া যায় কি না ভেবে দেখা! একটু ছাড় দেয়া গেলে, সেটাই হবে ‘সামা-হাত’। উদারতা। সহনশীলতা।

বিক্রেতা পরিচিত বলে, তাকে লজ্জায় ফেলে, জোর করে নামমাত্র মূল্যে খরীদ করা ঠিক নয়। ক্রেতা ভদ্র বলে, চড়া মূল্য হেঁকে, তাকে বিব্রত করা ভদ্রজনোচিত কাজ নয়। একজন ‘সামহ’-এর কাজ নয়।

একজন ক্রেতা বা বিক্রেতা কখন ‘সামহ’ হতে পারবে?
যদি শুধু নিজের লাভ নয়, অপর পক্ষের লাভের দিকেও নজর রাখা যায়। যদি পণ্য মেপে দেয়ার সময় ভালো ভালো দেখে বেছে দেয়া যায়। বাড়িতে আনার পর একটা বা দুইটা খারাপ দেখা গেলে সেটা মেনে নেয়া যায়!

একটাকা দামের একটা চকলেট কিনতে গেলেও আমরা ‘সামহ’ হয়ে উঠতে পারি। একখিলি পান কিনতে গেলেও আমরা ‘সামহ’ হয়ে উঠতে পারি। একটা দিয়াশলাই কিনতে গিয়েও আমরা ‘সামহ’ হয়ে উঠতে পারি। বাসের একটা টিকেট কিনতে গিয়েও আমরা ‘সামহ’ হয়ে উঠতে পারি।

এমনকি ক্রেতা বা বিক্রেতা যদি গরীব হয়, তাহলে ‘সামহ’ হয়ে ওঠার তাৎপর্য তো বহুগুণে বেড়ে যায়। শুধু কি তাই? বেচাকেনার সময়, ‘সামহ’ হওয়ার বিষয়টা মাথায় রাখলে, সামাজিক সুসম্পর্কের পাশাপাশি কত্তোবড় একটা সুন্নাত আদায়ের সওয়াবের ভাগীদার হতে পারি!

একজন রিকশাচালকের সাথেও আমরা সামহ হয়ে উঠতে পারি। একজন ফেরিঅলার সাথেও আমরা সামহ হয়ে উঠতে পারি। মাসিক ভাতা দেয়ার সময়, বাড়ির খাদেমের সাথেও আমরা সামহ হয়ে উঠতে পারি। বাসের অসহায় হেল্পারের সাথেও আমরা সামহ হয়ে উঠতে পারি। বাজারের এক কোনে বসা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শাক-সবজি বিক্রেতার সাথেও আমরা সামহ হয়ে উঠতে পারি।

হাট-বাজারে যদি শুধু এই একটা হাদীস বাস্তবায়ন করা যায়, সামাজিক অশান্তির বিরাট একটা অংশ এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক সংকটের সিংহভাগই উধাও হয়ে যাবে। দারিদ্র্য বিমোচনের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ভর্তুকি দেয়ার স্কীম হাতে নিতে হবে না।

আমরা কি পারি না, আজ থেকে ‘সামহ’ হয়ে ওঠার নববী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হতে? নবীজির আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্যে প্রস্তুত হতে? একজন সত্যিকারের ‘সামহ’ হয়ে উঠতে?

আসুন না, আমরা আজ থেকে একজন ‘সামহ’ মানুষে পরিণত হই! রাব্বে রাহীম ‘রহম’ করবেন! পেয়ারা নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুশি হবেন যে! তার শাফা‘আত নসীব তো হবেই!