৭৩তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – জান্নাতের টিকেট – শায়খ আতিক উল্লাহ


জান্নাতের টিকেট

একজন মুমিনের চূড়ান্ত চাওয়া কী? জান্নাতে প্রবেশ করা। কেউ কেউ বলতে আখেরাতে আল্লাহর দীদার লাভ করা। সেটাও জান্নাতে যাওয়া ছাড়া হবে না। জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিবন্ধক হলো: গুনাহ। আমাদের জীবনযাত্রা এমনই, গুনাহ বন্ধ করা যায় না। শতচেষ্টাতেও কিভাবে যেন গুনাহ হয়েই যায়।
এদিকে ফিরিশতারাও থেমে নেই। তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ হিশেব লিখে চলছেন। যাররা পরিমাণ ভুল করলেও রেহাই নেই। নিস্তার নেই। খসখস করে খাতায় নথিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে! পাশাপাশি আমাদের জান্নাতগমনও দুরূহ হয়ে যাচ্ছে!

নবীজি সা. আমাদেরকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আমাদের মুক্তির চিন্তাতেই তিনি বেচাইন থাকতেন। কিসে আমরা নাজাত পাবো, কী করে আমরা জান্নাত পাবো, অনুক্ষণ এই চিন্তা-ফিকিরেও ডুবে থাকতেন। তিনি জানতেন আমরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারবো না। আমরা দুর্বল। তাই তিনি ব্যবস্থা রেখে গেছেন! একটা দু‘আ শিখিয়ে গেছেন। সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জন্যে। দু‘আটা পড়লে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জান্নাত দিয়ে দেবেন!
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ”،
ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া আর কোনও উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি সাধ্যানুযায়ী আপনার প্রতি কৃত ওয়াদা রক্ষার চেষ্টা করছি। ও আপনাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অধীনে থাকার চেষ্টা করছি! আমার মন্দকর্মের ব্যাপারে আপনার পানাহ চাই! আমার প্রতি আপনার নেয়ামতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্মরণ করছি। আমার পাপের কথাও স্বীকার করছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ
দিনের বেলায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দু‘আটা পড়লে, সন্ধ্যার আগে মারা গেলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে রাতের বেলায় দু‘আটা পড়লে, সকাল হওয়া আগে মারা গেলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে! (বুখারী)

দু‘আটার নাম ‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার’ কেন হলো? ইস্তেগফারের নেতা? সাধারণত ইস্তেগফারগুলো হয়, সরাসরি ক্ষমাপ্রার্থনা দিয়ে। শুরুতে অন্য কোনও কথা থাকে না। এই দু‘আর শুরুতেই আে তাওহীদের কথা। বান্দার গুনাহের স্বীকারোক্তি। নেয়ামত লাভের স্বীকারোক্তি। এসব বলতে বলতে, বান্দাহর মধ্যে বিনয়নম্র ভাবের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বান্দার এই কাকুতি-মিনতি অবস্থা দেখে খুশি হয়ে ক্ষমা করে দেন।

এজন্যই নবীজি সা. দু‘আটা পড়ার জন্যে একটা শর্তারোপ করেছেন:
-দৃঢ়বিশ্বাস! হাঁ, একীনের সাথে দু‘আটা পড়া শর্ত। নাহলে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। ক্ষমা পেতে হলে, দু‘আটা বুঝে বুঝে পড়তে হবে। মনে মনে নির্দ্বিধ বিশ্বাস নিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই জান্নাতে যাওয়ার মতো ক্ষমা লাভ হবে।

দু‘আটা সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে পড়লেই চলবে।

আল্লাহুম্মা! আনতা রাব্বী লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আ‘লা আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত’তু, আউযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবূউ লাকা বিযামবি ফাগফির লী, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা!