৭৭তম পর্ব – একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে – আজীবন রোজা – শায়খ আতিক উল্লাহ


আজীবন রোজা

আমরা হয়তো খেয়াল করে থাকবো! এক ইবাদতের এক স্বাদ! এক রঙ! এক রূপ! সালাতের স্বাদ এক, সিয়ামের স্বাদ আরেক। ফজর সালতের ভাব এক, তারাবীহের স্বাদ আরেক। যাকাতের পরিতৃপ্তির ধরন এক, হজ্বের পরিতৃপ্তির ধরন আরেক!

সিয়াম এমন এক ইবাদত, প্রায় সব ধর্মেই এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। ধরন-প্রকরণে পার্থক্য থাকলেও মূল পদ্ধতি প্রায় এক: উপবাসযাপন! তার মানে এটা এক সার্বজনীন ইবাদত! পার্থক্য হলো, আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় সিয়াম পালন করি, তারা মানবনির্দেশিত পন্থায় পালন করে। আমাদের সিয়াম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তাদেরটা হবে না।

সিয়ামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
-এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে দেবেন। আর কোনও ইবাদতের ক্ষেত্রে এমনটা বলেন নি।
قَالَ اللَّهُ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ، إِلاَّ الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: সিয়াম ছাড়া আদমসন্তানের প্রতিটি আমলই তার নিজের জন্যে, সিয়াম আমার জন্যে, আমিই তার প্রতিদান দেবো! (বুখারী)

সিয়াম পালনে জাহান্নাম আমাদের থেকে এত দূরে সরে যাবে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জন্যে চমৎকার আমলটা রেখে গেছেন। আমাদের মুক্তির কথা চিন্তা করে। তিনি সিয়ামের ইবাদতটা বিভিন্নভাবে করে গেছেন। তার একটা হলো: প্রতিমাসে তিন রোজা! যাকে আইয়ামে বীজের রোজাও বলা হয়। চাঁদের ১৩-১৪-১৫তারিখের রোজা। এই দিনগুলোতে চাঁদের আলোতে রাতগুলো শাদা থাকে বলে: বীজ (শাদা) বলা হয়। নবীজি সা. বলেছেন:
مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللهِ، بَاعَدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا
আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখলে, আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাবেন (মুসলিম)।
হাদীসে ফি-সাবীলিল্লাহ বলা হলেও, হাদীসের ব্যাখ্যাকারগন বলেছেন: ইখলাস ও পরিপূর্ণ আনগত্যের সাথে ঘরে থেকে রোজা রাখলেও এই ফযীলত লাভ করা যাবে। জাহান্নামকে সত্তর খারীফ (শরৎ) দূরে সরিয়ে নেয়ার কথা বলে, নবীজি মূলত আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। রোজার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে চেয়েছেন। সামান্য পরিশ্রমেই অনেক বড় অর্জন করার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।

তিনরোজা সম্পর্কে নবীজি বলে গেছেন:
أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ: صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ
আবু হুরায়রা রা. বলেছেন: আমার হাবীব (সা.) আমাকে তিনটি বিয়য়ের ওসীয়ত করে গেছেন। আমি আমৃত্যু এগুলো ছাড়বো না:
ক: প্রতি মাসে তিনরোজা।
খ: সালাতুত-দুহা (ইশরাকের সালাত)।
গ: বিতির আদায় করে ঘুমানো। (মুত্তাফাক)।

এই হাদীসে কোন তিনদিন নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। আরেক হাদীসে আছে:
يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ”
নবীজি সা. আবু যর রা.কে বলছেন: তুমি প্রতি মাসে রোজা রাখতে চাইলে: ১৩ ১৪ ও ১৫ পনের তারিখে রোজা রাখো! (তিরমিযী)।

তিনদিন রোজা রাখার মাহাত্ম্য কী?
مَنْ صَامَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ

কেউ প্রতিমাসে তিনদিন রোজা রাখার মানে, আজীবন রোজা রাখা! (তিরমিযী)

প্রতিমাসে তিনদিন রোজা রাখলে আজীবন রোখার হিশেবটা কিভাবে হলো? সেটা কুরআনেই বলা আছে:
مَنْ جَاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
যে একটা নেককাজ করবে, তার জন্যে দশগুণ প্রতিদান থাকবে (আনআম: ১৬০)।
তারমানে একদিন রোজা রাখাটা দশদিন রোজা রাখার সমান। একে দশ। তিনে ত্রিশ। এভাবে প্রতিমাসে তিনদিন রাখলে, সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব লেখা হয়ে যাবে। একবার আমল করা শুরু করলে, প্রতিমাসে তিনদিন রোজা রাখা কিন্তু খুবই সহজ? কতো কতো আমল আমাদের থেকে ছুটে যায় সামথ্য না থাকার কারনে। কিন্তু তাওফীকে থাকা আমলগুলো কেন ছুটবে? আমরাও কি পারি না আবু হুরায়রা রা.-এর মতো করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে:
(لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ): আমি আমৃত্যু রোজাগুলো ছাড়বো না!