আবু তালিবের সমর্থন ও অত্যাচারের নতুন অধ্যায়

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কোনোভাবেই তাঁর কাজ থেকে নিবৃত্ত হচ্ছিলেন না; সাথিদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার, নবীজির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, তাঁর ধর্ম ও ধর্মকথাকে জাদুকরী আখ্যা দেওয়া, দিন-রাত মিথ্যা অপপ্রচার, শেষতক মুহাম্মদের (সাঃ) একমাত্র অভিভাবক আবু তালিবের কাছে তাঁর কাজ বন্ধের মন্ত্রণা-পরামর্শের বুদ্ধি—এর কোনো কিছুই যখন ফলপ্রসূ হতে দেখা গেলো না, বরং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর আদর্শ-প্রচারে নিত্য বেগবান ও গতিশীলই হচ্ছিলেন, তখন কুরাইশরা বুঝলো যে, কুরাইশরা শত বললেও আবু তালিব মুহাম্মদের (সাঃ) উপর থেকে তার পৃষ্ঠপোষকতা সরিয়ে নেননি; তারা আবার আবু তালিবের কাছে গেলো; বললো, ‘আবু তালিব, আমরা আপনাকে আমাদের জাতীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মুহাম্মদকে ফেরানোর অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু আপনি মুহাম্মদকে ফেরাননি। আপনি আমাদের স্বজাতি হয়েও মুহাম্মদের অন্যায় অনৈক্যের এই প্রচার ও অধর্মের পক্ষে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন; এগুলো ছাড়ুন। এই দেখুন, এ হলো ওলিদ ইবনে মুগিরার ছেলে ওমারা। এ হচ্ছে কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং ধার্মিক যুবক। আপনি একে পুত্ররূপে গ্রহণ করুন। এর শোনিতপাতের খেসারত এবং সাহয্যের আপনি অধিকারী হবেন। আপনি একে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিন। এ যুবক আজ হতে আপনার সন্তান বলে গণ্য হবে। এর পরিবর্তে আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রকে আমাদের হাতে সমর্পণ করে দিন। সে আপনার ও আমাদের পিতা, পিতামহদের বিরোধিতা করছে; আমাদের জাতীয়তা, একতা এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে এবং সকলের জ্ঞানবুদ্ধিকে নির্বুদ্ধিতার আবরণে আচ্ছাদিত করছে। তাঁকে হত্যা করা ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। এক ব্যক্তির বিনিময়ে এক ব্যক্তিই যথেষ্ট।’

আবু তালিব তাদের এই কদর্য প্রস্তাব আমলে তো আনলেনই না, বরং দ্বিধাহীনভাবে স্পষ্ট বললেন, ‘তোমরা যে কথা বললে এরচেয়ে জঘন্য এবং অর্থহীন কথা আর কিছু হতে পারে কি? তোমরা তোমাদের সন্তান আমাকে এ উদ্দেশ্যে দিচ্ছো যে, আমি তাকে খাইয়ে পরিয়ে লালন-পালন করবো আর আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দেবো এ উদ্দেশ্যে যে, তোমরা তাকে হত্যা করবে। আল্লাহর শপথ! কক্ষনোই এমনটি হতে পারে না।’

আবু তালিবের এই সরাসরি প্রত্যাখ্যান কাফেরদের খুব বেকায়দায় যেমন ফেললো, তেমন তারা জিঘাংসীও হয়ে উঠলো আগের থেকে বহু গুণে। বিপদের মস্ত পাহাড় ভেঙে পড়লো নবিজি ও তাঁর সঙ্গীদের উপর। আবু লাহাব তার ছেলেদের সাথে হওয়া নবীজির  দুই মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিলো, নবীজির পুত্র আবদুল্লাহ মারা গেলে উল্লসিত হয়ে ওই খবর সে চাউর করলো আর বললো : মুহাম্মদ লেজকাটা, নবিজি নামাযে দাঁড়ালে তাঁর উপর চাপিয়ে দেওয়া হতে লাগলো উটের ভূড়ি, পায়ে ছোড়া হলো পাথর, পথে বিছানো হলো কাঁটা—একটা জীবনকে সর্বতোভাবে বিষিয়ে তোলার সবরকম পাঁয়তারা চালিয়ে যেতে লাগলো মক্কার কাফেররা; এ অবস্থায় সাহাবিদের কী অবস্থা হয়েছিলো, তা সহজেই অনুমেয়। জলজ্যান্ত মানুষগুলো এক জ্বালামুখের মধ্যে দিন পাত করতে লাগলো। জীবন তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেললো…