আল মুতায বিল্লাহ

২৩২ হিজরীতে আল মুতায বিল্লাহ মুহাম্মাদ; ভিন্ন মতে, যাবের আবু আব্দুল্লাহ বিন মুতাওয়াক্কিল বিন রাশীদ ‘কাবীহা’ নামক রোমান বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।

মুসতায়িনকে অপসারণের পর ২৩২ হিজরীতে ১৯ বছর বয়সে খিলাফতের তখতে আরোহণ করেন। এর আগে এতো অল্প বয়সে কেউ খিলাফত পাননি। তিনি টগবগে যুবক ছিলেন।

মুতাযের হাদীসের উস্তাদ আলী বিন হরব বলেছেন,আমি তার চেয়ে সুন্দর খলীফা আর দেখিনি। তিনিই প্রথম খলীফা, যিনি ঘোড়াকে স্বর্ণের অলংকার পড়ান। পূর্ববর্তী খলিফাগণ নিজ নিজ ঘোড়ার গলায় হাল্কা রৌপ্যের অলংকার পড়াতেন।

মসনদে আরোহণের বছর ওয়াসেক কর্তৃক নিযুক্ত আশনাস নামক রাষ্ট্রের ডেপুটি কর্মকর্তা মারা যায়। তার পরিত্যক্ত সম্পদ হিসেবে পঞ্চাশ হাজার দিনার রেখে যায় – যা মুতায হস্তগত করেন। তার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন তাহেরকে নায়েব মনোনীত করেন। তিনি সর্বদা নিজের কাছে দুটি তলোয়ার বেঁধে রাখতেন। কিছুদিন পর তাকে অপসারণ করে সে স্থানে নিজের ভাই আবু আহমাদকে নিয়োগ করেন। তিনি সোনার মুকুট পড়তেন আর দুটি তলোয়ার বহন করতেন। তাকেও অপসারিত করে ওয়াসেত শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর মদ্যপ বাগাকে নায়েবের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেও শাহী মুকুট পরতো। সে এক বছর পর মুতাযের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। অবশেষে তাকে হত্যা করা হয় আর তার কাটা মাথা মুতাযের সামনে হাজির করা হয়।

এ বছর রযব মাসে তিনি তার ভাই মুঈদ বিল্লাহকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, বেত্ৰাঘাত করান আর বন্দী করে রাখেন। এতে মুঈদ পরলোক গমন করলে মুতায ভয় পেয়ে যান। হত্যার অপরাধে যেন অভিযুক্ত না হোন সে জন্য তিনি কাযীদের ডেকে সাক্ষ্য প্রদান করেন। কিন্তু এতে কোন আসর হলো না।

মুতায তুর্কীদের, বিশেষ করে সালিহ বিন ওসীফকে দেখে দারুণ ভয় পেতেন। একদিন তুর্কীরা অর্থের বিনিময়ে সালিহকে হত্যার কথা জানালে মুতায তার মায়ের কাছে কিছু অর্থ চাইলে তিনি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সে সময় কোষাগারে কোন অর্থকড়ি ছিল না। ঘুষ প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় তুর্কীরা সালিহ বিন ওসীফ আর মুহাম্মদ বিন বাগাকে সাথে নিয়ে অস্ত্ৰসজ্জিত হয়ে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে মুতাযকে বেরিয়ে আসতে বলে। তিনি অসুস্থ, বেরিয়ে আসতে পারবেন না – এ কথা জানিয়ে দেন। তারা কোলাহল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করে। মুতাযের পা ধরে বাইরে নিক্ষেপ করে। তাকে মারতে মারতে মুখ লাল করে দেয়া হয়। গরমের সময় ছিল,তুর্কীরা তাকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখে। তারা মুতাযকে তার বাইআত থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। এরপর কাযী বিন আবু শিওয়ারিবকে ডাকা হয়। তার সামনে তিনি নিজ বাইআত থেকে সরে যান। তারপর মুহাম্মদ বিন ওয়াসেক – যাকে মুতায বাগদাদে পাঠিয়ে দিয়েছিলো, তিনি বাগদাদ থেকে রাজধানী সামরাহতে এসে পৌঁছলে তিনি তার উপর খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেন আর তার হাতে বাইআত করেন।

এ ঘটনার পাঁচ দিন পর এক দল লোক এসে গোসল করানোর জন্য মুতাযকে হাম্মামে নিয়ে যায়। গোসলের পর তার পিপাসা লাগে। তাকে পানি দেয়া হয়নি। হাম্মাম থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বরফের পানি খাওয়ানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইন্তেকাল করেন। তিনিই প্রথম খলীফা, যিনি পিপাসায় কাতর হয়ে ২৫৫ হিজরীর শাওয়াল মাসের ৮ তারিখে পরলোক গমন করেন।

প্রথমে মুতাযের মা কাবীহা তাদের ভয়ে আত্মগোপন করে ছিল। পরে রমযান মাসে বেরিয়ে এসে সালিহ বিন ওসীফকে অনেক ধন-দৌলত অর্থাৎ তের লাখ দিনার আর দুটি জামা দেন, তারমধ্যে একটি জামায় জমরুদ আর অপরটিতে মতি ও ইয়াকুত জড়ানো ছিল। এ দুটি জামার আনুমানিক মূল্য দুই হাজার দিনার। এত সম্পদ দেখে ইবনে ওসীফ বললো,“এতো সম্পদ থাকার পরও পঞ্চাশ হাজার দিনারের জন্য এ নারী তার আপনি ছেলেকে হারিয়েছে।” ইবনে ওসীফ তার কাছ থেকে এগুলো নিয়ে তাকে মক্কা শরীফে পাঠিয়ে দেয়। কাবীহা মুতামাদের খিলাফত পর্যন্ত সেখানেই ছিল। এরপর সে সামরাহ ফিরে আসে আর ২৬৪ হিজরীতে পরলোক গমন করে।

মুতাযের যুগে যেসব ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন তারা হলেন – সাৱী সাকতী,হারুন বিন সাঈদ, মুসনাদের লেখক দারমী,আকবী প্রমুখ।