আল মুসতানসির বিল্লাহ আহমাদ

আল মুসতানসির বিল্লাহ আহমাদ আবুল কাসিম বিন যাহির বিন বি আমরিল্লাহ আবু নসর মুহাম্মাদ বিন নসর লিদ্দীনিল্লাহ আহমাদ।

শায়খ কুতুবুদ্দীন বলেছেনঃ আল মুসতানসির বিল্লাহ বাগদাদে বন্দী ছিলেন। তাতারিদের ফিতনার সময় জিন্দানখানা থেকে পালিয়ে পশ্চিম ইরাকে চলে যান। বিবরস সুলতান হওয়ার পর তিনি বনু মিহারিশ গোত্রের দশজন প্রতিনিধি নিয়ে সুলতানের কাছে আসেন। সুলতান বিচারক ও উচপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়ে কায়রোতে নিয়ে আসে। প্রধান বিচারপতি তাজুদ্দীন বিন বিনতুল ইআয তার বংশ পরম্পরা সাবেত করেন।

৬৫৯ হিজরির রজব মাসের তেরো তারিখে সর্বপ্রথম সুলতান তার হাতে খিলাফতের বাইয়াত করে। এরপর প্রধান বিচারপতি তাজুদ্দিন, এরপর শায়খ আযুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম, অভিজাত ব্যক্তিবর্গ, এরপর রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এরপর একে একে সকলেই তার হাতে বাইয়াত করে।

তার নামে খোদিত মুদ্রা চালু হয় আর তার নামে খুৎবা পাঠ শুরু হয়। তিনি তার ভাইয়ের উপাধি আল মুসতানসির ধারণ করেন। জনগন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়।

তিনি জুমার দিন শেভাযাত্রার মাধ্যমে ঘোড়ায় চড়ে জামে মসজিদে গিয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা পাঠ করতেন। তিনি খুৎবার মধ্যে সর্বপ্রথম বনু আব্বাসের মর্যাদা আর শ্রেষ্ঠত্বের বিবরণ দিয়ে সুলতান আর সকল মুসলমানের জন্য দুয়া করতেন। এরপর নামায পড়াতেন, নামাযের পর পুরানো রীতি অনুযায়ী সুলতানকে খিলআত প্রদান করতেন। তিনি কায়রোর বাইরে একটি শিবির স্থাপন করেন।

৬৫৯ হিজরির শাবান মাসের চার তারিখে সোমবারে তিনি সুলতানকে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে সেখানে যান। উযির, উমারা আর বিচারপতিগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। খলীফা নিজ হাতে সুলতানকে খিলআত আর মালা পড়িয়ে দেন। ফখরুদ্দিন বিন লুকমান মিম্বরে আরোহণ করে খলীফার ফরমান পাঠ করে শুনান। খিলআত গ্রহণ করে সুলতান তার উপদেষ্টাকে ঘোড়ায় চড়িয়ে চলে যেতো, আর তার সাথে পদব্রজে চলতো আমিরদের একটি বড় জামাআত। তিনি কায়রোকে অলংকৃত করেন। সুলতান খলীফার জন্য একজন উপদেষ্টা, দূত, বাবুর্চি, প্রহরী, কোষাধ্যক্ষ, পত্র লেখক নিয়োগ করে। গোটা রাজ্য তার হাতে অর্পণ করে। তাকে দেওয়া হয় একশোটি ঘোড়া, ত্রিশটি খচ্চর, দশ কাতার উট ইত্যাদি।

যাহাবি বলেছেনঃ খলীফা মুসতানসিরের ভাতিজা মুত্তাকীর তার খিলাফত আর কারো হস্তগত হয়নি, তবে হলবের শাসনকর্তা আমীর শামসুদ্দীন আফরাশ আল হাকিম বি আসরিল্লাহ উপাধি ধারণ করে খিলাফতের দাবী করেন আর হলবে খিলাফত কায়েম করায় তার নামে মুদ্রা ও খুৎবা পাঠ শুরু হয়।

কিছু দিন পর খলীফা আল মুসতানসির ইরাক যাওয়ার ইচ্ছা করেন। সুলতান তাকে দামেশ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য দামেশক পর্যন্ত যায়। দামেশকে গিয়ে সুলতান খলীফা আর মৌসুলের শাসনকর্তার আওলাদদের এক লাখ দিনার আর ৬৬ হাজার দিরহাম প্রদান করেন। এরপর খলীফা শরক, ওলীয়ান, মৌসুল, বুকারা আর জাযীরার বাদশাহদের নিয়ে হলবে যান। হলবের শাসনকর্তা নিজের খিলাফত ত্যাগ করে খলীফার আনুগত্যে চলে আসেন আর নম্রতা প্রদর্শন করেন। এরপর খলীফা সামনে অগ্রসর হয়ে হাদীসা দখল করে নেন। তাতারিরা এসে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে অনেক মুসলমান শহীদ হোন আর খলীফা নিরুদ্দেশ হোন। কেউ কেউ বলেন, তিনিও শহীদ হোন। এটাই মনে হয় বিশুদ্ধ অভিমত। কেউ কেউ বলেন, তিনি পালিয়ে যান, পরবর্তীতে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি ৬৬০ হিজরির মুহাররম মাসের তিন তারিখের ঘটনা। এ হিসাব অনুযায়ী তিনি মাত্র ছয় মাস খিলাফত পরিচালনা করেছেন, তার পর আল হাকিম যিনি হলবে খিলাফতের দাবী করেছিলো, সে আল হাকিম বি আমরিল্লাহ উপাধি ধারণ করে খিলাফতের তখতে আরোহণ করে।