আল মুসতাইন বিল্লাহ আবুল ফজল

আল মুসতাইন বিল্লাহ আবুল ফজল আল আব্বাস বিন মুতাওয়াক্কিল বাঈ খাতুন নামক তুর্কি বাঁদির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।

৮০৮ হিজরিতে মুতাওয়াক্কিলের মৃত্যুর পর তার বাইয়াত হয়। আল মুলকুন নাসর ফারাজ সে সময় সুলতান।

নাসর শায়খের সাথে লড়াইয়ে পরাজিত ও নিহত হলে ৮১৫ হিজরির মুহাররম মাসে খিলাফতমুক্ত হয়ে সুলতানও খলীফার কাছে বাইয়াত করে। খলীফা বাগদাদে পরিপক্ব বাইয়াত গ্রহণের পর আমীর উমারাদের নিয়ে মিসরে আসেন। পয়সায় তার নাম খোদাই করা হয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে হাযার তাকে নিয়ে একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন।

খলীফা মিসর এসে দুর্গে অবস্থান করেন। শায়খুল আসতাবলও সেই দুর্গে ছিল। মিসরের রাষ্ট্রীয় কাজ করার জন্য শায়খকে মনোনীত করা হয়। তাকে নিযামুল মুলুক উপাধি দেওয়া হয়। উমারাগণ খলীফার দরবারে কাজ শেষ করে শায়খের খিদমতে হাজির হতো। সব কাজের দায়িত্ব তার উপর ছিল। তারা খলীফার কাছ থেকে কাজের লিখিত অনুমোদন নিতো। আর শায়খ ফরমান জারি করতো, আস্তে আস্তে কাজ তার হাতে চলে আসে। এমনকি খলীফার অজান্তেও অনেক ফরমান জারি হতে থাকে। ফলে খলীফা মর্মাহত হোন। অবশেষে শায়খ তার উপর সালতানাত অর্পণের জন্য খলীফা সমীপে আবেদন করেন। খলীফা এ শর্তেই এই প্রস্তাব গ্রহন করে যে, তাকে কেল্লা ছেড়ে নিজ বাড়িতে চলে যেতে হবে। শায়খ এ শর্ত প্রত্যাখ্যান করে মুঈদ উপাধি ধারণ করে জবরদস্তিমূলক সুলতান হয়ে যায়। এরপর সে খলীফাকে অপসারণ করে তার ভাই দাউদের কাছে বাইয়াত করে নেয়। মুসতাইন কেল্লা ছেড়ে সপরিবারে আপন নিবাসে চলে আসেন। শায়খ মুসতাইনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ আর তার সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সংবাদ পেয়ে সিরিয়ার নায়েব নওরুজ বিচারক আর ওলামাদের সমবেত করে এ ব্যাপারে ফতোয়া জানোতে চায়। তারা মুঈদের কাজ অবৈধ হিসেবে ফতোয়া দেন। ফলে নওরুজ মুঈদের সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সংবাদ পেয়ে ৮১৭ হিজরিতে মুঈদ সসৈন্যে যুদ্ধে যায়। মুসতাইন ইস্কানাদারিয়া চলে গেলে সেখানে গিয়ে তাকে বন্দী করা হয়। ততর সুলতান হলে তাকে মুক্তি দিয়ে কায়রো যাওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু তিনি ইস্কান্দারিয়াকে নিজের স্বপ্নের নগরী মনে করে সেখানেই তার বসবাসের জন্য ভবন নির্মাণ করেন আর সেখানেই থেকে যান। অবশেষে ৮৩৩ হিজরির জামাদিউল আখের মাসে প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে খলীফা ইন্তেকাল করে।

৮১২ হিজরিতে প্রথম দিন নীল নদের পানি আশ্চর্যজনক ভাবে কমে যায়। পরের দিন আবার নীল নদের পানিতে শহর প্লাবিত হয়।

৮১৪ হিজরিতে ভারত সম্রাট গিয়াসউদ্দিন শাহ বিন ইস্কান্দার শাহ খলীফার কাছে অনেক ধন দৌলত ও উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে খিলাফতের দরবারে উপাধি প্রদানের আবেদন জানান।

তার শাসনামলে যেসব ওলামায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেন তার হলেন – ইয়ামনের কবি আল মুফিক আন নশরী, হাম্বলী আলেম নাসরুল্লাহ বাগদাদী, নাহুবিদ শামসুল মুঈদ মক্কী, শিহাবুল হিসবানী, ইয়ামানের মুফতি শিহাবুন নশরী, ফারাইয আর হিসাব গ্রন্থের লেখক ইবনুল বাহায়েম, ইয়ামানের কবি ইবনুল আফীফ, কাযি আসাকিরের পিতা হানাফী আলেম মুহিব বিন শিহনা প্রমুখ।