‘তাসবীহ’, ছায়ানিবিড় প্রশান্তি! – শায়খ আতিক উল্লাহ (দা.বা)

(১): বয়েসের সাথে যিকিরের একটা অদৃশ্য সম্পর্ক আছে। ছোটবেলার যিকির আর বড়বেলার যিকিরে গুণগত মানে পার্থক্য হয়ে যায়। একজন বালকের বা যুবকের যিকির আর একজন বৃদ্ধের যিকিরে তফাত আছে। একজন বৃদ্ধ যতটা মনযোগ আর আন্তরিকতা দিয়ে যিকির-তাসবীহ পাঠ করেন, সাধারণত যুবকের যিকিরে ততটা দরদ মহব্বত থাকে না।

(২): খেয়াল করলে দেখতে পাবো, পরিণত বয়েসী কেউ যখন যিকির করেন, বা তাসবীহ পাঠ করেন, তার চেহারায় অপূর্ব এক দ্যুতি ও পরিতৃপ্তি খেলা করতে থাক। তার যিকিরের আওয়াজ যাদের কানে যায়, তাদের মধ্যেও অন্যরকম এক সুখী সুখী উপলব্ধি ছড়িয়ে যায়। কেমন এক প্রশান্তিময় অনুভুতিতে ভেতরটা শীতল হয়ে ওঠে।

(৩): মৌখিক উচ্চারণের সাথে হৃদয়ের বিশ^াসের গভীর সংযোগ আছে। বয়স্ক কেউ যিকির করলে, তার যিকিরের সাথে কলবের দৃঢ়বিশ্বাসও যুক্ত থাকে। অল্পবয়েসীদের যিকিরেও কলবের সংযোগ থাকে, তবে বয়স্ক ব্যক্তির তুলনায় কম থাকে সাধারণত।

(৪): একজন জ্ঞানী ঈমানদার বৃদ্ধের ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ আর একজন যুবকের ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’-এর কেমন পার্থক্য, সেটা আশেপাশে তাকালেই বুঝতে পারব।

(৫): শেষরাতে কোনও জ্ঞানী বৃদ্ধের জিকিরের গুঞ্জরণ শোনার তাওফীক হয়েছিল? তিনি যখন গভীর রাতের নিঝুম ক্ষণে গুনগুন করে তিলাওয়াত করেন, তাসবীহ পাঠ করেন, আল্লাহর যিকির করেন, চারপাশটা কেমন যেন আরও নিরব হয়ে যায়। সবকিছু যেন উৎকর্ণ হয়ে যিকির শোনে।

(৬): এমন চিত্রের সাথে কি পরিচয় আছে? আমি ঘরে বিছানায় শুয়ে আছি। সুবহে সাদিক হয়েছে। আশেপাশের একটি দু’টি মসজিদের মিনার থেকে ফজরের সমুধুর আযান ভেসে আসতে শুরু করেছে। আযান শেষ। এবার মুসল্লিদের মসজিদমুখী হওয়ার পালা। বাড়িটা রাস্তার পাশে। একটু পর, মহল্লার বৃদ্ধ মানুষটি যিকির করতে করতে মসজিদে যাচ্ছেন। আমি শুয়ে শুয়ে তার যিকিরের আওয়াজ শুনছি। নিরব চরচারে যিকিরের আওয়াজ ছাড়া আর কোনও ধ্বনি নেই। এমনটা হয়েছিল কখনো?

(৭): নিয়মিত যিকির করেন, এমন কোনও বৃদ্ধকে যখন সামনা সামনি পাই, গভীর দৃষ্টিতে তাদের চোখ বোলাই। তাদের মুখাবয়বে সবসময় এক গভীর পরিতৃপ্তির ছাপ ফুটে থাকতে দেখি। শুধু কি বৃদ্ধ? যে কোনও যিকিরকারীর মধ্যেই বৈশিষ্ট্যটা থাকে। বৃদ্ধদের কথা আলাদা করে বলার কারণ, তারাই অন্যদের তুলনায় বেশি যিকির করেন।

(৮): তাসবীহ-যিকিরের সাথে আত্মিক পরিতৃপ্তির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। বিষয়টা আগে তেমন পরিস্কারভাবে জানা ছিল না। শুধু যিকিরকারী সুখী বৃদ্ধদেরকে দেখে মনে মনে জানতাম অস্পষ্ট ধারনা ছিল, যিকির করলে, মনু সুখী হয়। কিন্তু একটা আয়াত পড়ে চমকে উঠলাম,
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ
এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ ও হামদে রত থাকুন এবং রাতের মুহূর্তগুলোতেও তাসবীহতে রত থাকুন এবং দিনের প্রান্তসমূহেও, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান (তোয়াহা ১৩০)।

(৯): তবে যিকিরটা হঠাৎ হঠাৎ করলে হবে না। দিনরাত যিকিরে বুঁদ হয়ে লেগে থাকতে হবে। তাহলেই সুখীমনের অধিকারী হওয়া যাবে। আয়াতে বলতে গেলে একটা মুহূর্তও বাদ যায়নি। সূর্যোদয়ের আগে, সূর্যাস্তের পরে, গভীর রাতে, দিনের শুরুতে, দিনের শেষে যিকির করতে বলা হয়েছে। তাসবীহ পড়তে বলা হয়েছে তাহলে সন্তুষ্টি মিলবে।

(১০): এজন্য আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সময়গুলোতে শ্রেষ্ঠতম তাসবীহ ‘সলাত’ ফরয করে দিয়েছেন। আয়াতে (لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ) সন্তুষ্ট হওয়ার বিষয়টা শুধু দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই সন্তুষ্টি আখেরাতেও থাকবে। দুনিয়ার তাসবীহের সুফল আমি দুনিয়া তো বটেই, আখেরাতেও ভোগ করতে পারব।

(১১): একজনের সাথে আয়াতটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। যিকির-তাসবীহের সাথে মানসিক প্রশান্তির বিষয়টা বললাম। তিনি আরেকটা আয়াতের সন্ধান দিলেন। সেটাতেও প্রসঙ্গটা উঠে এসেছে,
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ
নিশ্চয়ই আমি জানি তারা যে সব কথা বলে তাতে আপনার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। (তার প্রতিকার এই যে,) আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তার তাসবীহ পাঠ করতে থাকুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন (হিজর ৯৭-৯৮)।

(১২): মন খারাপ? নানা দুশ্চিন্তা এসে মনের ডালে বাসা বেঁধেছে? সারাক্ষণ মনটা ভার ভার হয়ে থাকে? নানামুখী মানসিক চাপে জর্জরিত? কোনও সমস্যা নেই। আল্লাহ তা‘আলা নবীজি সা.-কে অব্যর্থ সমাধান দিয়েছন। ব্যবস্থাপত্রটা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। তাসবীহ পাঠ আর যিকিরই হবে সমস্ত দুশ্চিন্তা-উদ্বেগের সংহারক।

(১৩): কত সেকেন্ড, কত মিনিট, কত ঘণ্টা, কত সপ্তাহ, কত মাস চলে গেছে! আমি শুধু শুধু চিন্তা করে নষ্ট করেছি। অহেতুক কুচিন্তায় মনকে অচল করে রেখেছি। অথচ তাসবীহ-যিকির করলে, নিমেষেই সেসব উবে যেত। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দুনিয়ার জীবনকে পরীক্ষার জন্য দিয়েছেন। আমি কি নেক আমল করি নাকি বদআমল করে জীবন কাটাই সেটা যাচাই করতে চেয়েছেন। আমি কেন এত মূল্যবান একটা উপহারকে হেলায় ফেলায় দুশ্চিন্তায় নষ্ট করে ফেলব। পরীক্ষার হলে একমিনিট সময় চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকে?

(১৪): যিকির-তাসবীহের কথা শুনলে মনে হয়, এই আমল শুধু মানুষই করে, মানবসমাজের বাইরে আর কেউ যিকির করে না। এটা ভুল ধারনা। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই আল্লাহর যিকির করে। তাঁর তাসবীহ জপে,

(১৫): ক: বজ্রধ্বনি তাসবীহ পাঠ করে,
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ
বজ্র তাঁরই তাসবীহ ও হামদ জ্ঞাপন করে (রা‘দ ১৩)।

(১৬): খ: পাহাড় ও পাখি তাসবীহ পাঠ করে,
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ ۚ
আমি পর্বতসমূহকে দাঊদের অধীন করে দিয়েছিলাম, যাতে তারা পাখিদেরকে সাথে নিয়ে তাসবীহরত থাকে (আম্বিয়া ৭৯)।

(১৭): গ: সাত আসমান ও যমীন তাসবীহ পাঠ করে। এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে, সবই তাসবীহ পাঠ করে, তবে আমরা তাদের তাসবীহ পাঠ বুঝি না, এই যা।
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ
সাত আসমান ও যমীন এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত সৃষ্টি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে, এমন কোনও জিনিস নেই, যা তাঁর সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বুঝতে পার না (বনী ইসরাঈল ৪৪)।

(১৮): ঘ: কায়েনাতের প্রতিটি বস্তু তাসবীহ পাঠ করে। তাদের তাসবীহ পাঠের আলাদা ধরন আছে। স্বতন্ত্র পদ্ধতি আছে,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالطَّيْرُ صَافَّاتٍ ۖ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهُ وَتَسْبِيحَهُ ۗ
আপনি কি দেখেননি আসমান ও যমীনে যা-কিছু আছে, তারা আল্লাহরই তাসবীহ পাঠ করে এবং পাখিরাও, যারা পাখা বিস্তার করে উড়ছে। প্রত্যেকেরই নিজ-নিজ নামায ও তাসবীহের পদ্ধতি জানা আছে (নূর ৪১)।

(১৯): কারো কারো কাছে অবাক লাগে, এ কি করে সম্ভব? একটা জড়পাথর, সেটাও তাসবীহ পাঠ করে? মনে হয় কুরআন কারীমে ভিন্ন কিছু বোঝানো হয়েছে বা তাসবীহের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এভাবে বলা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। এমন চিন্তা ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেয়া যাবে না। ঈমান চলে যাবে। যতই অবিশ^াস্য মনে হোক, বাস্তবেই জড়পদার্থও যিকির করে। তাসবীহ পাঠ করে। পাথরকে জড়পদার্থ কে বলেছে? বিজ্ঞানীরা। আমি কুরআন কারীমকে পাশ কাটিয়ে বিজ্ঞানীদের কথাকে ধ্রুবক ধরে নিচ্ছি? হাদীসেই এর নযীর আছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,
ولقد كنا نسمَعُ تسبيحَ الطعامِ وهو يؤكَلُ .
আমরা খাওয়ার সময় খাবারের তাসবীহ শুনতে পেতাম (বুখারি৩৫৭৯)।

(২০): সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ পরিস্থিতিতে, বিশেষ সময়ে জড়পদার্থের তাসবীহ শুনেছেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এটা সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ বলেই দিয়েছেন (وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ) কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বুঝতে পার না। আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ কোনও কারণে, জড়পদার্থকে মানুষের মতো যবান দিয়ে দেন, তখন মানুষ তাদের কথা শুনতে পারে। দাউদ আ. সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন,
يَا جِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُ وَالطَّيْرَ ۖ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ
হে পাহাড়-পর্বত! তোমরাও দাঊদের সঙ্গে আমার তাসবীহ পড় এবং হে পাখিরা তোমরাও (সাবা ১০)।

(২১): সূরা সাদেও দাউদ আ.-এর প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً ۖ كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ
আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম যাতে তারা তার (দাউদের) সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবীহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরকেও, যাদেরকে একত্র করে নেওয়া হত। তারা তার সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) যিকিরে লিপ্ত থাকত (১৮-১৯)।

(২২): নবীজি সা.-এর হস্ত মুবারকে নুড়ি পাথরও তাসবীহ পাঠ করেছিল। আবুদ দারদা ও সালমান ফারেসী রা.-ও রান্নার হাঁড়ির তাসবীহ পাঠ শুনেছিলেন। নবীজি সা. খোদ বলেছেন,
إنِّي لأعرفُ حجرًا بمكَّةَ كان يسلِّمُ عليَّ قبل أنْ أُبعثَ . إنِّي لأعرفهُ الآن
আমি মক্কার একটি পাথরকে এখনো চিনি, সেটা আমাকে নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে সালাম দিত (মুসলিম ২২৭৭)।

(২৩): কুরআন কারীমের প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান থাকলে, একজন মুমিন কিছুতেই তাসবীহ পাঠ থেকে বিরত থাকতে পারে না। পথে ঘাটে, ঘরে বাইরে যেখানেই মুমিন থাকবে, তার মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাবে, আমি যে পাটিতে বসেছি, সেটা তাসবীহ পাঠ করছে। আমি যে আসনে বসেছি, সেটা তাসবীহ পাঠ করছে। আমি যে গাছ দেখতে পাচ্ছি, সেটা তাসবীহ পাঠ করছে। আমি যে পাখি দেখছি, সেটা তাসবীহ পাঠ করছে। আমি কেন বসে থাকব? আমি কি করে চুপচাপ বসে থাকতে পারি?

(২৪): সূরা ইসরা, হাদীদ, হাশর, সফফ, জুমু‘আ, তাগাবুন, আ‘লা। এই সাত সূরা শুরু হয়েছে তাসবীহ দিয়ে। ইসলামের সবচেয়ে বড় কর্মগত ইবাদতও মূলত তাসবীহ। রুকুতে গিয়ে আমরা বলি ‘‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম’। সিজদার তাসবীহে পড়ি ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা’।

(২৫): নবীগনও বেশি বেশি তাসবীহ পড়তেন। এটা তাদের নবুওয়াতি ওযীফা ছিল। মুসা আ.-এর দু‘আটা খেয়াল করলেই ব্যাপারটা চোখে পড়ে। তিনি আল্লাহর কাছে সাতটি বিষয় প্রার্থনা করেছেন,
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي هَارُونَ أَخِي اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي
হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ খুলে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে। আমার স্বজনদের মধ্য হতে একজনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন। আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার শক্তি দৃঢ় করে দিন। এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন (তোয়াহা ২৫-৩২)।

(২৬): এতগুলো চাওয়া পেশ করেছেন। কেন? দু’টি কাজের জন্য,
كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا
যাতে আমরা বেশি পরিমাণে আপনার তাসবীহ করতে পারি। এবং বেশি পরিমাণে আপনার যিকির করতে পারি (তোয়াহা ৩৩-৩৪)।

(২৭): ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাগরের তলদেশে আছেন। মাছের পেটে। বাঁচার আপাত কোনও আশা নেই। তখন ইউনুস আ. কী করলেন? তাসবীহ পাঠ করলেন,
وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
আর মাছ সম্পর্কিত (নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম)-কে দেখুন, যখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল, আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে অন্ধকার থেকে ডাক দিয়েছিল, (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনও মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী (আম্বিয়া ৮৭)।

(২৮): ইউনুস আ. যদি তাসবীহ পাঠ না করতেন, তাহলে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেতেন না। তাসবীহ পাঠের কারণেই আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন,
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
সুতরাং সে যদি তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত-তবে মৃতদেরকে পুনর্জীবিত করার দিন পর্যন্ত সে সেই মাছের পেটে থাকত (সাফফাত ১৪৪)।

(২৯): ফিরিশতাগণও ক্লান্তিহীনভাবে তাসবীহ পাঠ করতে থাকেন,
يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ
তারা রাত-দিন তাঁর তাসবীহতে লিপ্ত থাকে, কখনও অবসন্ন হয় না (আম্বিয়া ২০)।

(৩০): আল্লাহর আরশের চারপাশে যারা থাকে, তারা নিশ্চয়ই সবচেয়ে সেরা কাজই করবে, তারাও তাসবীহ পাঠ করেন,
وَتَرَى الْمَلَائِكَةَ حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ ۖ
আপনি ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবেন, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর তাসবীহ পাঠ করছে (যুমার ৭৫)।

(৩১): যেসব ফিরিশতাগণ আল্লাহর আরশ বহন করে আছেন, তাদের বৈশিষ্ট্যও বলা হয়েছে তাসবীহ পাঠ,
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
যারা (অর্থাৎ যে ফিরিশতাগণ) আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর তাসবীহ পাঠ করে (মু’মিন ৭)।

(৩২): তাসবীহ পাঠ শুধু কি দুনিয়ার কাজ? জি¦ না, জান্নাতে পর্যন্ত মুমিনগণ তাসবীহ পাঠ করবেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ
(অপরদিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের ঈমানের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে এমন স্থানে পৌঁছাবেন যে, প্রাচুর্যময় উদ্যানরাজিতে তাদের তলদেশ দিয়ে নহর বহমান থাকবে। তাতে (প্রবেশকালে) তাদের ধ্বনি হবে এই যে, হে আল্লাহ! সকল দোষ-ত্রুটি থেকে আপনি পবিত্র (ইউনুস ৯-১০)।

(৩৩): আমি আশরাফুল মাখলূকাত। আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। আমাকে (أَحْسَنِ تَقْوِيم) উৎকৃষ্টতম ছাঁচে সৃষ্টি করেছেন। আমাকে সৃষ্টিই করেছেন (لِيَعْبُدُونِ) তাঁর ইবাদত করার জন্য। সেই আমিই কেন তার তাসবীহ পাঠ করতে ভুলে যাই? অন্য যা কিছু আছে, সেসবকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমার সেবার জন্য। তারা পারলে আমি কেন পারব না?