পরকালের পথে যাত্রা – পর্ব ১৮ – জাহান্নামের বাসিন্দা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

যে সব কারণে চিরস্থায়ী কিংবা সাময়িক কালের জন্য জাহান্নামে অবস্থান করতে হবে ইনশাল্লাহ আমরা তা আলোচনা  করব।

 

যারা চিরকাল জাহান্নামের শাস্তিপ্রাপ্ত হবেঃ  দু’ শ্রেণীর মানুষ চিরকাল জাহান্নামের আযাবপ্রাপ্ত হবে । এ’দু শ্রেনী হলঃ মুনাফিক আর কাফের। এই আযাব সাময়িক সময়ের জন্য কিংবা ক্ষণস্থায়ী নয় , এক মিলিয়ন বা বিলিয়ন বছরের নয় বরং এ দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে চিরকালের জন্য থাকবে যে আযাবের শুরু আছে তবে শেষ নেই। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা বলেন  
“ আর যারা কুফরী করবে ও আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামী;সেখানে তারা চিরকাল থাকবে”। (সুরা বাকারাহঃ ৩৯ )

একটা চিন্তা আমার মাথায় উকি দিত, কিভাবে একজন ৬০/৭০ বছরের পাপের জন্য চিরকালের জন্য আযাব ভোগ করবে ! কেন তারা দুনিয়াতে যতটুক সময় অতিবাহিত করেছে ঠিক ততটুক সময়ের জন্যই কেবল শাস্তি পাবে না ? 

মত্যু বলে কয়ে আসে না, হঠাৎ করে আসে। তাই  চিন্তা করুন যে লোকটি ৬০ বছর ধরে বেঁচে আছে সে এখনো কুফরী করছে ৬১ বছর পরেও কুফরী করে চলেছে । সে ৬৫ বছর পরেও কুফরী করে চলেছে, ব্যাপারটা এরকম যে সে যদি চিরকাল বেঁচে থাকে সে কুফরের উপরেই থাকবে। কারণ সে নিয়্যতই করেছে চিরকাল কুফরি করার, তাই সে চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে। সুতরাং নিয়্যত খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। 

এবার মুনফিকদের ব্যাপারে আসা যাক। যারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাস্তি ভোগ করবে তারা হল মুনাফিক। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, “মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে,” (সুরা নিসাঃ১৪৫) 
 
আর সর্বনিম্নস্তর হল নিকৃষ্টতম । মুনাফিকদের অবস্থা কাফেরদের চেয়ে ভয়াবহ হবে কারণ তাদের কুফরির পাশাপাশি প্রতারণা আর মিথ্যার মত খারাপ গুণগুলো রয়েছে। আর তারা সত্যের খুব নিকটে থাকে, তারা তা ভালোভাবে জানে ।  ঈমান আনার ভান ধরলেও তারা সত্য অস্বীকার(কুফরী) করে । তাই মুনাফিকদের অবস্থা কাফেরদের চেয়ে ভয়াবহ হবে। কুফফাররদের চেয়ে মুনাফিকরা উম্মাহর বেশী ক্ষতি সাধন করেছে। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা কুরআনে মুনাফিকদের ব্যাপারে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। কারণ কুফফাররা প্রকাশ্যে খোলামেলা মুসলিমদের বিপক্ষে দাঁড়ায়। আর এই মুনাফিকরা উম্মাহর বিরুদ্ধে গোপন ও প্রতারণামূলক চক্রান্তের নকশা আঁকে। আমরা  প্রথম যুগের মুসলিমদের অভ্যন্তরীন বড় ফিতনাসমুহর দিকে তাকালে দেখতে পাই যেএসবের পেছনে মুনাফিকদেরই হাত ছিল। এমনকি এই মুনাফিকরা মদিনাতেও রাসুলুল্লাহ (সা) কে সবচেয়ে বেশী বিপদের সম্মুখীন করেছিল যারা কিনা একসাথে মদিনাতেই বসবাস করত!

 

যারা চিরকাল নয় বরং সাময়িক জাহান্নামের আযাব ভোগ করবেঃ
 এরা হল সেই  লোকেরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সা) এর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও এত পাপকর্ম করে যে দুনিয়ার ভোগান্তি, কবরের আযাব কিংবা হাশরের দিনের দুঃখ-যন্ত্রনা তাঁদের গুনাহসমুহ মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট না। তাই তাদের কিছু সময় জাহান্নামে কাটাতে হবে।অনেক ধরনের পাপকর্মের জন্য এই নিয়তি বরণ করতে হবে যার মধ্য হতে আমি কিছু উল্লেখ করব যেসব কারণের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহতে সুনির্দিষ্টভাবে জাহান্নামের সতর্কীকরণ করা হয়েছে । আমি এই ব্যপারে রেফারেন্স বই হিসাবে শাইখ উমার আল আসকারের  কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম বইটি ব্যবহার করেছি যেখানে তিনি খুব সুন্দর করে বিষয়গুলো দলিল সহ উপস্থাপন করেছেন।

১. ভ্রান্ত আকিদার ফেরকাসমুহঃ 
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘ইহুদীরা ৭১টি দলে (ফেরকা) এবং খ্রীস্টানরা ৭২টি ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে আর এই মুসলিম  উম্মাহ ৭৩ টি ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। একটি ছাড়া বাকি সব জাহান্নামে যাবে। 

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এই উম্মাহ পুর্ববর্তী উম্মাহগুলোর থেকে বেশী ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে।   
উল্লেখ্য, খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয় যে, এখানে বিভিন্ন ফিকাহের মাযহাবের ব্যাপারে কিংবা বিভিন্ন ইসলামিক দল কিংবা সংগঠন যারা একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাদের কথা বলা হচ্ছে না। 

এখানে সেসব ফেরকার কথা বলা হচ্ছে যাদের ইসলামের মুল আকিদা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে। যারা ইসলামের সুনির্দিষ্ট  মুলনীতি ব্যতিরেকে নিজেদের জন্য নতুন বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফেরকা আছে যারা রাসুলুল্লাহ (সা) এর পরেও নবুয়্যতে বিশ্বাসী। কিন্তু এটা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা আকিদার বিষয় যে রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর আর কোন নবী আসবেনা । যেমনটা কাদিয়ানীরা নতুন নবীর উপর ঈমান আনে। তাই তারা এই ফেরকার মধ্যে গন্য হবে এবং তারা জাহান্নামী। এরকম আরেকটি ফেরকা হল বাহইয়িয়্যাহ। এমনকি কয়েকবছর আগে তারা নিজেদের আলাদা ধর্মের ঘোষণা দিয়েছে। তারা আর কোনভাবেই ইসলামের সাথে নেই।  

আরেকটি বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন ।এই হাদিসটির অর্থ এই না যে, উম্মাহর বেশীর ভাগই জাহান্নামী। ৭৩ টির মধ্যে ৭২ টি জাহান্নামে প্রবেশ করার অর্থ এই দাঁড়ায় না যে উম্মাহর বেশীর ভাগই জাহান্নামে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। কারণ উম্মাহর বেশীর ভাগ লোক বিশেষজ্ঞ নয়, এরা সাধারন লোকজন, এরা মূলত বিশেষ কোন ফেরকার অনুসরণ করে না। এরা শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনে, মসজিদে গিয়ে সালাহ আদায় করে। তারা কোন বিশেষ পরিচয় বহন করলেও কোন নির্দিষ্ট ফেরকার অংশ হিসেবে গণ্য হবে না । তারা সালাহ আদায় করে, যাকাত দেয়, তারা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং ইসলামের মুল নীতিমালা সমুহও মান্য করে। এমনকি তারা ওইসব ফেরকা সংশ্লিষ্ট ভ্রান্ত আকিদাও পোষণ করে না।     
 
প্রাসঙ্গিক আরেকটি বিষয় জানার আছে তা হল, হাদিসটি বলছে না,এই ৭২ ফেরকা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। হয়ত কিছু ফেরকা চিরকাল থাকতে পারে আর কিছু চিরকাল নাও থাকতে পারে।

২. অযোগ্য ও দুর্ণীতিপরায়ণ বিচারকঃ 
তিরমিযী শরিফের একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, “তিন শ্রেণীর  বিচারক আছে। যাদের মধ্যে দু’শ্রেণী বিচারকই জাহান্নামে আর বাকী এক শ্রেণী জান্নাতে যাবে। এই  দু;শ্রেনীর এক শ্রেণী হল ঐসব বিচারকগণ যারা সত্য জানা সত্ত্বেও পার্থিব লোভ-লালসার উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করে আর অন্য শ্রেণীর বিচারকগণ হল যারা অজ্ঞ, বিচার করার কোন জ্ঞান কিংবা যোগ্যতাই  নেই। এ দু’শ্রেণীর বিচারকগণ জাহান্নামে  যাবে আর বাকী এক শ্রেণীর বিচরকগণ যাদের জ্ঞান আছে যারা সত্য জানেন এবং সে অনুযায়ী ফয়সালা করেন, তাঁরা জান্নাতে যাবে।

৩. মিথ্যা (জাল) হাদিস রচনা করাঃ
 বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন “যে আমার নামে মিথ্যা কিছু আরোপ করবে সে জাহান্নামের আগুনে তাঁর আসন বানিয়ে নেবে”। এখানে জাল হাদিস রচনা করার কথা বলা হচ্ছে এমনকি যদিও তা ভাল অর্থ বহন করে। 

আর জাল হাদিস প্রচার করা সমপর্যায়ের পাপ না হলেও এটা একটা গুনাহের কাজ।তাই আমাদের হাদিস বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

৪.অহংকার(কিবর)ঃ 
শব্দটি কিবর হিসেবে এসেছে। এটা খুবই মারাত্মক একটি পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন “যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণও অহংকার(কিবর) থাকবে সে জান্নাতে যেতে পারবে না”। এখানে অহংকারে পরিপুর্ণ অন্তরের কথা বলা হচ্ছে না। এখানে খুবি অল্প পরিমাণ অহংকারের পরিণাম সম্পর্কে বলা হচ্ছে! রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে একথা শুনার পর এক সাহাবী বললেন “লোকেতো চায় তাঁর কাপড় ভালো হোক, জুতা ভালো হোক”। অর্থাৎ সাহাবী(রা) জিজ্ঞেস করছেন এটা অহংকার কিনা? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন “আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য্য পছন্দ করেন। অর্থাৎ আপনি যদি ভাল জামা-কাপড় পরিধান করেন এতে কোন সমস্যা নেই, এটা অহংকার নয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন এই কিবর বা অহংকার কি তা বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন” কিবর(অহংকার) হল সত্য(হক) প্রত্যখ্যান করা এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।(মুসলিম)

এখানে সত্য প্রত্যখ্যান করা বলতে কি বুঝাচ্ছে? এর অর্থ হচ্ছে আপনার সামনে সত্য আসার পরেও নিজের  আত্মদম্ভ ও অহমিকার কারণে তা প্রত্যাখ্যান করা। কারণ আপনি আপনার অজ্ঞতা প্রকাশ করতে চান না। কারণ আপনার নিজের উপর এতই আত্মবিশ্বাস যে সত্য হওয়া সত্ত্বেও অন্য কারো আদর্শ কিংবা মতামত আপনি গ্রহণ করতে পারছেন না এটাই হল কিবর,অহংকার এবং একই সাথে এটা অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।

৫.হত্যা করাঃ 
শরীয়াহর গ্রহণযোগ্য কোন কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা অনেক বড় পাপের কাজ। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা এ জন্য জাহান্নামের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা কুরআনে বলেন,  
“যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে(বিশ্বাসী) ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে, তাঁর শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার উপর আল্লাহ্‌র ক্রোধ ও অভিসম্পাত।আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। (সুরা নিসাঃ৯৩)

কি ভয়াবহ শাস্তি দেখুন! জাহান্নাম, আল্লাহর অভিসম্পাত এবং মহাশাস্তি! এখানে কোন বিশ্বাসী কিংবা মুমিনকে  হত্যার কথা বলা হচ্ছে। 

এখন, কাফেরদের অন্যায়ভাবে হত্যার ব্যাপারে কি হবে? যদি মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে যদি শান্তি চুক্তি বিদ্যমান থাকে তবে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন “যে ব্যক্তি শান্তি চুক্তি করার পর  কাউকে হত্যা করে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।

৬.রিবা-সুদঃ
রিবা হল সুদ। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা বলেছেন, যে সুদের কারবার  করে তার শাস্তি জাহান্নাম। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা) যে সাতটি বড় গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তাঁর মধ্যে এই রিবাহ বা সুদ একটি। তাই সুদকে কখনো ছোট করে দেখবেন না। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা কুরআনে বলেন, 
“অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও ” (সূরা বাকারাহঃ২৭৯)
এখানে আল্লাহ বলছেন, যে সুদকারবার করে তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হতে বলেছেন। এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাস(রা) বলেন “কিয়ামতের দিন সুদখোর ব্যক্তি কবর থেকে শয়তানে আচ্ছন্ন ব্যক্তির মত ওঠে আসেব এবং ফেরেশতারা তাকে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে বলবে আল্লাহ্‌ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে  যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। সুতরাং এটা খুবই মারাত্বক গুনাহের কাজ।এখন এই সুদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ এখন সুদের সাগরে নিমজ্জিত।

৭.মানুষের সম্পদ  আত্মসাৎ করাঃ 
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার বিষয়ে  আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন ,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য। (সুরা নিসাঃ ২৯-৩০)

৮.জালিমদের সাথে একাত্মতা পোষণ করা কিংবা সহযোগী হওয়াঃ
যদি কোন যালিম কিংবা অত্যাচারী রাজা,প্রেসিডেন্ট বা নেতার প্রতি যদি আপনার ভালবাসা শ্রদ্ধা থাকে তবে আপনি হাশরের দিন তাদেরই সাথে অবস্থান করার ঝুকি আছে। আমাদের উচিত এসব জালিম এবং স্বৈরশাসক হতে দূরে থাকা এবং  তাদের কর্মকান্ডকে সমর্থন না দেয়া। আর যদি আমরা তা করি তাহলে, 
আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা বলেন 
“তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুকে পড়ো না। তাহলে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে..”(সুরা হুদঃ১১৩)
উক্ত আয়াতে ‘যালিমিন’ দের কথা বলা হয়েছে যারা কিনা সীমালঙ্ঘন করে এবং অত্যাচার করে কিন্ত এটার অর্থ এও যে, যারা পাপের প্রচার-প্রসার করে থাকে। আমাদের উচিত তাদের কাজের প্রতি আমাদের অসমর্থন বোঝাতে তাদের নিকট হতে দূরে থাকা।  

এখানে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, আমি যতক্ষণ না কোন খারাপ কাজ করছি, ততক্ষণ ঠিক আছি ! 
 কেউ যতক্ষণ না কোন ভুল করছে ততক্ষণ সে ঠিক আছে। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। আপনি হয়ত নিজে জুলুম-অন্যায় করছেন না কিন্তু আপনি যারা এসব পাপ করছে তাদের সাথে আছেন, তাদের কাজকে অগ্রাহ্য করছেন না, অধিকন্তু তাদের সাথে সুন্দর দিন কাটাচ্ছেন। এটাই একটা গুনাহের কাজ ! 

উদাহরণসরূপ অত্যাচারী যালিম শাসকের প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে কাজ করা। আপনি নিজে অত্যাচার কিংবা যুলুম করছেন না তবে যারা করছে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এটা খবই মারাত্মক!  

আব্বাসীয় খিলাফতের বিভিন্ন সময় খলিফা হিসেবে ভাললোকও ছিল এবং অনেক মন্দলোকও ছিল। তো একজন পুলিশ অফিসার ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল “যারা যালিম শাসকের সাহায্যকারী তার মধ্যে কি আমি ও গন্য হব”? আহমদ ইবন হাম্বল উত্তরে বললেন “না, তুমি তো নিজেই একজন যালিম। যারা সাহায্য করছে তুমি তাদের মধ্যে গন্য হবে না বরং তুমি তো নিজেই এই যুলুমবাজ ও অত্যাচারী শাসনের একজন ! নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য যারা কিনা এটাকে টিকিয়ে রাখছে ।  অর্থাৎ, তুমি শুধুমাত্র তাদের অংশই নও, বরং তুমি নিজেও একজন যালিম !

৯. পোশাক পরিধান সত্ত্বেও নগ্ন মহিলা এবং  চাবুকওয়ালা পুরুষেরা। 
এটা কিয়ামতের একটি নিদর্শন ও বটে। রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেন,  দু’ শ্রেণীর লোক জাহান্নামের প্রবেশ করতে যাচ্ছে যাদেরকে এখনো তিনি দেখেন নি। এদের একটি হল ওসব মহিলারা যারা পোশাকপরিধান করা সত্তেও নগ্ন। অর্থাৎ তাদের পোশাকগুলো  এমন সংকীর্ণ এবং আঁট-সাট হবে যে শরীরের গঠন ও সৌন্দর্য্যের স্থানগুলো বাহির হতে সুস্পষ্ট বুঝা যায়। ২য় শ্রেণীতে পুরুষদের কথা বলা হয়েছে যা ইতিপুর্বে আমি উল্লেখ করেছি। ওসব নিরাপত্তাবাহিনী যাদের হাতে চাবুক থাকবে। এবং এটা আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র আবিস্কারের পুর্বেই অতীতে মুসলিম বিশ্বে ঘটেছে। এমন নিরাপত্তা বাহিনী ছিল যারা হাতে চাবুক ও লাঠি নিয়ে বের হয়ে লোকজনের উপর যুলুম-নির্যাতন করত। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন তাদের শাস্তি হল জাহান্নামে ।

১০. প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতাঃ
বুখারিতে একটি হাদিস আছে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন এক মহিলা জাহান্নামে  প্রবেশ করবে একটি বিড়ালের জন্য আর অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেন এক মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি কুকুরের জন্য।  তাই প্রাণীদের প্রতি ভাল বা নিষ্ঠুর আচরণ আখিরাতে আপনার অবস্থান পাল্টে দিতে পারে। এ হতে আমরা বুঝতে পারি আমাদের কোন আমলই  ছোট করে দেখা উচিত নয় কারণ আমরা জানি না ঠিক কোন আমলের কারণে আমরা আখিরাতে ক্ষমা পেয়ে যেতে পারি।     
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন ঐ মহিলা বিড়ালটিকে বন্দি করে রেখেছিল। সে বিড়ালটিকে বাহিরেও যেতে দেয় নি এমনকি কোন খাবারও দেয় নি। একসময় বিড়ালটি মারা গেল।আর এক এ কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। 
আর অন্যদিকে ঐ মহিলা একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে তার জীবন বাচিঁয়েছে, আর তাই সে জান্নাতে যাবে!

১১.পার্থিব উদ্দেশ্যে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করাঃ 
কেউ কুরআন শিখছে , ফিকহ কিংবা শারিয়াহ অধ্যয়ন করছে কিন্তু এই জ্ঞান অর্জন তার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেন যে ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ পাড়ি দেয় আল্লাহ্‌ তাঁর জান্নাতের পথ সহজ করে দেন”। তথাপি এমন লোক আছে যারা পার্থিব উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করে,দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে। এতে তারা যেন ভাল বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পারে, নেতৃত্বের আসনে বসতে পারে ইত্যাদি। এসব কিছুর উদ্দেশ্য হল দুনিয়া। 
মূল হাদিসটি ইবনে মাজায় রয়েছে। রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেন “যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে,তবে সে জান্নাতের সুবাস ও পাবে না”।  অর্থাৎ সে জান্নাতের ধারে কাছেও যেতে পারবে না।

১২. সিদর বৃক্ষ নিধনঃ 
সিদর এক ধরনের গাছ যা আরবে জন্মায়। হাদিসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন 
’যে ব্যক্তি সিদর গাছ কাটবে আল্লাহ তার মাথাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন”। আবু দাউদ(রা) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা করে হয়েছিল। গাছ কাটার ফলে জাহান্নামে যেতে হবে? আবু দাউদ উত্তরে বলেছিলেন, ‘এই সিদর গাছ পথিককে ছায়া দেয়, প্রাণীদের খাদ্যের যোগান দেয় আর যদি কেউ এ গাছ কোন কারণ ছাড়াই কেটে ফেলে তবে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’। এটা আমেরিকার বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন অপেক্ষা কঠোর।   
কিন্তু তাই এটার অর্থ এই নয় যে আপনি সাধারণত একটা গাছ কেটে ফেললেন আর এ জন্যই আপনাকে জাহান্নামে যেতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় কিংবা গ্রহণযোগ্য কারণ থাকলে আপনি কাটতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই। উদাহরণস্বরূপ জ্বালানী কাঠের প্রয়োজনে,নির্মাণকাজে কিংবা ইত্যাদি। হাদিসটি বিনা কারণে কিংবা হয়ত খুবি সামান্য কিছু কাঠের জন্য কেটে অপচয় করার কথা বলা হচ্ছে।  

বিশেষ করে আরবে এমনিতেই গাছের আকাল। কাউকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য কিংবা কোন প্রাণীকে খাবার সংগ্রহের জন্য অনেক দুর পাড়ি দিতে হয় ।এ অবস্থায় আপনি এ গাছগুলো কেটে ফেলে অনেক বড় ক্ষতি করছেন। তাই রাসুলুল্লাহ (সা) এটা আরবের নিষ্প্রাণ মরুভুমির ক্ষেত্রে বলেছেন। শহরাঞ্চলের জন্য এর হুকুম ভিন্ন।

১৩. আত্মহত্যাঃ 
হাদিসটি বুখারিতে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে”। 
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এখানে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকার কথা বলার পরেও কেন আমি তা এ অস্থায়ী ক্যাটাগরীতে নিয়ে এসেছি? মূলত হাদিসে অনন্তকাল বলতে অনেক লম্বা সময় বুঝানো হচ্ছে । এ পাপ এত মারত্মক, যার ফলে জাহান্নামে অনেক লম্বা সময় ধরে অবস্থান করতে হবে যে কারণে এখানে অনন্তকাল শব্দটি ব্যবহার করা যায়, যদিও আমরা জানি কেউ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর উপর মত্যুবরণ করলে কোন এক সময় পর হলেও সে জান্নাতে যেতে পারে। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি আত্মহত্যা কত জঘন্য একটি পাপ!

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ্‌র অশেষ কৃপায় আমরা জাহান্নামের অংশটা শেষ করলাম। 



ইনশাল্লাহ আমরা এখন জান্নাতের অংশ চলে যাব 

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন কে?
 জান্নাতে সর্বপ্রথম যিনি প্রবেশাধিকার লাভ করবেন তিনি হলেন মুহাম্মদ(সা)। আনাস ইবনে মালিক(রা) হতে বর্ণিত সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) বলেন “হাশরের দিন অন্যান্য আম্বিয়াকিরামের উম্মাহর চেয়ে আমার উম্মাহই সবচেয়ে বড় হবে আর আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করব”। লোকজনের বিচারকার্য শেষ হওয়ার পুর্বেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।   

উল্লেখ্য যে এ পর্যন্ত বর্ণিত বেশির ভাগ হাদিসই সহিহ বুখারি ও মুসলিমের । কারণ বুখারি ও মুসলিমে এসব ব্যাপারে এত হাদিস আছে যে আমাদের অন্য কোনো গ্রন্থের দিকে যাওয়ার খুব একটা প্রয়োজন পড়েনি। তথাপি অন্য হাদিসগ্রন্থসমুহ থেকে ইতিপুর্বে যে হাদিসগুলো উল্লেখ করেছি তাও সব সহিহ।  

যা বলছিলাম, রাসুলুল্লাহ(সা) সহিহ মুসলিমের অন্য একটি হাদিসে বলেন “আমি জান্নাতের নিকট এসে তাঁর দরজা খুলতে বলব। জান্নাতের দারোয়ান বলবেন, কে আপনি? আমি বলব। ‘মুহাম্মদ’। দারোয়ান বলবেন, ‘আমি আদিষ্ট হয়েছি যেন আপনার পূর্বে কারো জন্য দরজা না খুলি’। অর্থাৎ জান্নাতের দরজায় যিনি বছরের পর বছর ধরে পাহারা দিচ্ছেন তাকে আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, মুহাম্মদ(সা) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ(সা) ব্যতিত কারো জন্য যেন দরজা খোলা না হয়। 

মুহাম্মদ(সা) এর প্রবেশের পর প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজারের মত আম্বিয়া কিরাম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এখন, আম্বিয়া কিরামের পর মানব জাতির মধ্যে কে প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন?  সুনান আবু দাউদের একটি হাদিসের দিকে তাকাই। আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ(সা) বলেন, 
‘আমার হাত ধরে জিব্রীল আমাকে জান্নাতে নিয়ে যান, এবং আমার উম্মাহ যে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে তা দেখান, তিনি বলেন এই সেই দরজা যা দিয়ে আপনার উম্মাহ জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবু বকর (রা) তা শুনে বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ ! যদি আমিও আপনার সাথে তা দেখতে পেতাম! রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, “ও আবু বকর! আমার উম্মাতের মধ্যে আপনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন”। 

এখানে রাসুলুল্লাহ(সা) বলছেন এই উম্মাতের মধ্যে তিনি প্রথম প্রবেশ করবেন,তবে কিভাবে আমরা জানলাম তিনি পূর্ববর্তীসহ সকল উম্মাতের মধ্যেও প্রথমজন! এর কারণ হল অন্য একটি হাদিস তিনি বলেন “আম্বিয়া কিরামের পর মানবজাতির মধ্যে সবার চেয়ে উত্তম হল আবু বকর সিদ্দিক (রা)।

এই উম্মাহর ৭০০০০ জনঃ

আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) কে অনুসরণকারী দলটি হবে মুসলিমদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশাকারি সর্ব প্রথম দল। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে রাসূল(সাঃ ) বলেন “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা  আমার উম্মাতের মধ্যে এমন ৭০০০০ জনকে দিয়েছেন যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে কোন ধরনের হিসেব ছাড়াই। সুতরাং এরা হল বাছাইকৃত সেই অল্প কিছু মানুষ , উম্মাহর সকল যুগ থেকে বাছাইকৃত মাত্র ৭০০০০ জন, যাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নিজে বাছাই করবেন। যখন আর প্রতিটা মানুষকে হিসেব নিকেশ এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে এই ৭০০০০ মানুষ তখন জান্নাত লাভ করবে কোন ধরনের হিসেব নিকেশ ছাড়াই। তারা পেছনের দরজা দিয়ে  জান্নাতে প্রবেশ করবে। কি এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে তারা যে কারণে তারা বিনা হিসাবেই জান্নাত লাভ করবে? তাদের বৈশিষ্ট্য হবে এই যে তারা তাদের সব কিছু দিয়ে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।

রাসূল(সা:) যদিও এই সংখ্যা নিয়ে বেশ খুশি ছিলেন কিন্তু তিনি তার উম্মাহর জন্য সবসময় সর্বোত্তমটাই চেয়েছেন ।তাই তিনি(সাঃ) চেয়েছেন আরো বেশি সংখ্য্যক মানুষ কে যেন বিনা হিসাবে জান্নাতে দাখিল করা হয়। মুসনাদে আহমাদেই এটা বর্ণিত আছে যে রাসূল(সাঃ) বলেন তার(সাঃ) উম্মাহর মধ্যে থেকে ৭০০০০ জনকে বিনা হিসাবে জান্নাত দেয়া হবে। তখন তিনি সেই সংখ্যা যেন আরো বৃদ্ধি করা হয় সেই অনুরোধ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন প্রতি ১ জনের সাথে আরো ৭০০০০ জন করে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেন। আমরা যদি গুণ করি তাহলে দেখতে পাই যে সংখ্যাটা হয়




 ৪ মিলিয়ন এবং ৯০০০০০। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা  অতঃপর বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিলেন। আল্লাহ বলেন আমি আমার তিন অঞ্জলি পরিমাণ অতিরিক্ত মুসলিমকে  বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাব। রাসূল(সাঃ) তাই সবসময় সাহাবাদেরকে তাদের সর্বোত্তমটুকু করতে বলেন যেন তারা ঐ ৭০০০০ জনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

গরীব মুহাজিরিনগণ

পরবর্তী যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে সম্পর্কে মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়। আবু ‘আব্দুল রাহমান(রাঃ)  বর্ননা করেন আমি একবার আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন আল ‘আস (রাঃ) সাথে বসেছিলাম এমন সময় তিন জন লোক সেখানে আসলেন এবং বললেন  “ আল্লাহর শপথ আমাদের নিকট কোন কিছুই নেই না কোন খাদ্যদ্রব্যের মজুদ না কোন চড়ার মত প্রানী কিংবা ধন সম্পদ”।  তাদের এ কথা  শুনে আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন আল ‘আস (রাঃ)  বললেন “ আমি তোমাদের পছন্দনীয় যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত আছি। তোমরা যদি আমাদের কাছে আস তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রাপ্য যা রেখেছেন আমরা তোমাদের তা দিব।যদি তোমরা চাও আমি তোমাদের অবস্থার কথা খলীফার নিকটে তুলে ধরব অথবা তোমরা চাইলে ধৈর্য ও ধারন করতে পার।  কারণ আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি “ মুহাজিরিনদের মধ্যে যারা দুঃস্থ,জান্নাতের পথে তারা ধনী মুহাজিরিনদের চাইতে ৪০ বছর অগ্রগামী হবে”। একথা শুনে লোক গুলো বল্ল “আমরা ধৈর্য ধারন করলাম এবং আমাদের কোন কিছুর প্রয়োজন নেই”।

মুহাজিরিনদের মধ্যে যারা নিঃস্ব ছিলেন গরীব ছিলেন তারা ধনীদের চেয়ে কেমন করে ৪০ বছর অগ্রগামী হবেন ? এই বিষয়ে আল-হাকিম থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন যখন মুহাজিরিন রা জান্নাতের প্রবেশদ্বারে পৌঁছাবে তখন প্রবেশদ্বার এ রক্ষী যারা থাকবে তারা মুহাজিরিনদের এ দলটিকে এত দ্রুত জান্নাতের দরজায় আশা করবেনা। তাই তারা প্রশ্ন করবে “ আপনারা কি ইতোমধ্যে হিসাব নিকাশ এর মধ্যে দিয়ে গেছেন” তখন সেই নিঃস্ব মুহাজিরিন রা বলে উঠবে  “ কিসের জন্য হিসাব ?দুনিয়াতে আমাদের কোন কিছুই ছিলনা যার জন্য আমাদের হিসাব দিতে হবে। আমরা আমাদের তরবারি গুলো আমাদের কাঁধে  বহন করতাম এবং আমরা আল্লাহর জন্য মৃত্যু বরণ করেছি”। এই হাদিসটির অর্থ হল পুনরুত্থান দিবসে যে জিনিস গুলো মানুষের অপেক্ষাকে দীর্ঘায়িত করবে তাদের একটি হল ধন সম্পদের হিসাব নিকাশ ।

অন্য একটি হাদিস থেকে জানা যায় রাসূল(সাঃ) বলেন “ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের পা নড়বেনা যতক্ষন না তোমাদের ৪ টি প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে ২ টি প্রশ্ন হল তুমি কিভাবে তোমার সম্পদ অর্জন করেছিলে? এবং তুমি তোমার অর্জিত সম্পদ কোন পথে ব্যয় করেছিলে?”

এই বিষয় গুলো জান্নাতে প্রবেশ এর সময় এর সাথে সম্পর্কিত মর্যাদার সাথে নয়। কেউ এক জন পরে এসেও তার আগে যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারবেন। বিচার দিবসে সম্পদশালীদের অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমান থাকতে হবে কারণ তাদের হিসেব নেওয়ার মত সম্পদের পরিমাণ হবে অনেক বেশি। 
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূল(সাঃ) বলেন  “ আমরা সর্বশেষ উম্মত কিন্তু বিচার দিবসে আমরাই থাকব সর্ব প্রথমে  এবং আমরাই সর্ব প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করব”। (মুসলিম)  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সর্বোত্তম উম্মাতকে শেষ সময়ের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। এমনকি নবী রাসূল দের মধ্যে কেউ কেউ রাসূল(সাঃ) এর অনুসারী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা   আমাদের কে এই বিরল সম্মান দান করেছেন যা আমরা অনেকটা সহজাত হিসাবেই গণ্য করে থাকি।

জান্নাতের দরজা সমূহঃ
আল্লাহ বলেন “ (সে উত্তম আবাস হচ্ছে) চিরস্থায়ী এক জান্নাত,যার দরজা (হামেশাই) তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে”(৩৮:৫০)

আল্লাহ আরো বলেছেন “ (অপরদিকে) যারা তাদের মালিককে ভয় করেছে তাদের সবাইকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে; এমনি করে যখন সেখানে(জান্নাতের দোরগোড়ায়) তারা এসে হাজির হবে(তখন তারা দেখতে পাবে) তার দরজা সমূহ তাদের অভিবাদনের জন্য খুলে রাখা হয়েছে ,(উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে) তার রক্ষী(ফেরেশতা) তাদের বলবে তোমাদের প্রতি সালাম তোমরা সুখে থাকো চিরন্তন জীবন কাটানোর জন্য এখানে দাখিল হয়ে যাও।“ (৩৯:৭৩)

এই অভিনন্দন কে তুলনা করুন সেই কঠোর তিরস্কার এর সাথে জাহান্নামীরা জাহান্নামের দরজায় পৌঁছে যা গ্রহন করবে। 
জান্নাতীদের সুন্দর সব অভিবাদনে ফেরেশতারা স্বাগত জানাবে। আপনি সেই তীব্র আনন্দের দৃশ্যটি কল্পনা করুন, জান্নাতীরা দ্রুত গতিতে ধাবিত হচ্ছে জান্নাতের দরজা গুলোর দিকে এবং সেই সাথে তাদের কানে ভেসে আসছে ফেরেশতাদের প্রীতিকর সব স্বাগতসম্ভাষণ।

জান্নাতে মোট ৮ টি দরজা রয়েছে। রাসূল(সাঃ) বলেন “ জান্নাতের ৮ টি দরজা আছে তাদের মধ্যে একটির নাম হল আর- রাইয়ান  সেখান দিয়ে শুধু মাত্র রোযাদার ব্যাক্তিগনই প্রবেশ করবে। তাছাড়া আর কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা”

সাহাবারা সাওমের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সাহাবাদের একজন বলেন “ এই দুনিয়াতে বাস করার কোন আকাঙ্খা নেই আমার নেই শুধু মাত্র কয়েকটি জিনিসের ইচ্ছা ব্যাতীতঃ গ্রীষ্মের দীর্ঘ দিন গুলোতে সাওম পালন করা, শীতের দীর্ঘ রাত্রি গুলোতে ইবাদত করা এবং সেই ভাইদের সাথে বসা যারা কথা বলার সময় বেছে নেয়ে   সর্বোত্তম শব্দ গুলোকে অনেকটা ফলের ঝুড়ি থেকে ফল বেছে নেয়ার মত করে, তাদের কথায় কোন ধরনের অশ্লীলতা থাকবেনা অভিসম্পাত থাকবেনা এবং তারা কোন অপ্রয়োজনীয় কথা বার্তাও বলবেনা।

রাসূল(সাঃ) বলেন “ যে ব্যক্তি নামাযীদের দলভুক্ত হবে তাকে নামাযের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহ্বান করা  হবে।যে দাতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে তাকে দাতাদের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে রোযাদারদের দলভুক্ত হবে তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে আহবান করা হবে।” আবু বকর সিদ্দীক রাঃ বলেন “হে আল্লাহর রাসূল এমন কেউ কি হবে যাকে উক্ত সকল দরজাসমূহ থেকে আহ্বান করা  হবে?” তিনি (সাঃ) বললেন “ হ্যাঁ হবে। আর আমি আশা করি তুমি হবে তাদের মধ্যে একজন।”

সুতরাং কল্পনা করুন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) জান্নাতের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন আর ফেরেশতারা প্রত্যেক দরজা  থেকে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে ডাকছেন তাদের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্যে। আপনারা জানেন যখন আপনারা বাজারে যান তখন সেখানে অনেক ধরনের জিনিসপত্র থাকে এবং প্রত্যেকে আপনাকে তার দোকানে যাওয়ার জন্য ডাকতে থাকে ? সুতরাং জান্নাতের ফেরেশতারাও আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে ডাকতে থাকবে যেন তিনি তাদের দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করেন,কারণ তারা সকলেই এই সম্মানে সম্মানিত হতে চায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা    বলছেন এই ফেরেশতারা নিষ্পাপ আর সেই নিষ্পাপ ফেরেশতারাই আবু বকর সিদ্দিক( রাঃ) কে ডাকতে থাকবে তাদের নিকট দিয়ে যাওয়ার জন্য।

মানুষের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে সৃষ্টির নিকৃষ্টতম হওয়ার। এতটাই নিকৃষ্ট যে পশুর চেয়েও অধম হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব। আবার তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফেরেশতাদের চেয়েও উত্তম হওয়া সম্ভব মানুষের পক্ষে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা    বলেন “ তারা গবাদি পশুর ন্যায়। না তারা এর চেয়েও নিকৃষ্ট”। 
তাদের মধ্যে কতক কে আবার ফেরেশতাদের চেয়েও উচু মর্যাদায় সম্মানিত করা হবে।

৮ টি দরজা দিয়ে প্রবেশঃ

আপনি যদি ৮ টি দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে চান তাহলে দুটো পদ্ধতি আছেঃ

১) এই হাদিসটির উল্লেখ রয়েছে আল বুখারিতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে এই সাক্ষ্য দিল যে “এক আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ নাই , তাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর দাস এবং প্রেরিত রাসূল, ঈসা(আঃ) তাঁর দাস এবং প্রেরিত রাসূল, এবং আরো সাক্ষ্য দিল যে জান্নাত এবং জাহান্নাম সত্য , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সেই ব্যাক্তিকে জান্নাতের আটটি দরজা দিয়ে আহবান জানাবেন”। এই হাদিসটিতে গভীর এবং সুদৃঢ় ঈমানের কথাই বলা হচ্ছে।  (


মুসলিম)

২) এই হাদিসটি বর্ণিত আছে মুসলিম এ। রাসূল সাঃ বলেন “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি উত্তম ও পূর্ণাংগরুপে ওযু করার পরে বলে “ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল”  তাহলে তার জন্য বেহেশতের ৮ টি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে”। এটি ওযুর পরবর্তী দুআ।

 

আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন উল্লিখিত দুটো হাদিসেই শাহাদার বাক্য গুলো রয়েছে। সুতরাং এই কালিমার তাৎপর্য অনেক। কিন্তু কোন ব্যক্তির এই বাক্য গুলো শুধু মুখে উচ্চারণ করাই যথেষ্ট নয় । তাকে এই কালিমার উপর নিশ্চিত এবং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।  

জান্নাতের দরজা গুলো কত বড় ? মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল(সাঃ) বলেন “ জান্নাতের প্রতিটি দরজার প্রশস্ততা হবে মক্কা ও হাজারের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।” এই দূরত্ব বলতে দরজার চৌকাঠের মধ্যবর্তী দূরত্ব কে বুঝানো হচ্ছে সমগ্র দরজার দুরত্ব কে নয়। এই দূরত্ব অনেক বিশাল দূরত্ব,প্রায় ১০০০ মাইলেরো বেশি। আল্লাহই ভাল জানেন ইহা একটি অনুমান মাত্র।

 

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে রাসূল সাঃ বলেন “ দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ৪০ বছরের হাঁটা পথের সমান”। অর্থাৎ এতটাই প্রশস্ত হবে যে প্রতিটি দরজা ৪০ বছর হেঁটে অতিক্রম করতে হবে । অতঃপর রাসূল(সাঃ) বলেন “এমন একটা দিন আসবে যেদিন দরজা গুলো ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিচার দিবসে এত বেশি পরিমাণ লোক সেই দরজা গুলো দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে যে সেগুলো ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে যদিও প্রতিটা দরজার সর্বমোট যে দূরত্ব হেঁটে অতিক্রম করতে চাইলে ৪০ বছর সময় লাগবে”।

 

তারা কারা যারা বিচার দিবসের পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা ইতোমধ্যে সেখানে প্রবেশ করেছে?

১) আশ শাহীদ 
২) বাচ্চারা যারা অতি অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে।

আর কারা ইতোমধ্যেই জান্নাতে ছিলেন? আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম।

“এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।”

আর শহীদদের ব্যাপারে এসেছে, সহীহ মুসলিম, থেকে, 

এটা শহীদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ সম্মান, তারা জান্নাতে বসবাস করছেন,  




সুতরাং এটা হচ্ছে কবরবাসীদের অবস্থা।