পরকালের পথে যাত্রা – পর্ব ১৯ – জান্নাতী বনাম জাহান্নামী

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদ, ওয়ালা আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়া সাল্লাম।

এই উম্মত থেকে কতজন জান্নাতে যাবে?

এই হাদীসটি বুখারীতে আছে, রাসূল সা. বলেন, আমাকে [মিরাজের রাতে]  কিছু লোকের সামনে নিয়ে যাওয়া হল । রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ফেরেশতারা আমাকে দেখালেন [কিয়ামতের দিন] কি ঘটবে? আমি দেখলাম আমার সামনে দিয়ে একজন নবী কতক উম্মত নিয়ে যাচ্ছিলেন।

আরেকজন নবীকে অনুসরণ করছে দশজন। আরেকজন নবীকে অনুসরণ করছে পাঁচজন।

আরেকজন নবী একাই চলেছেন। সেখানে কিছু নবী এমন ছিলেন যাদের কোন অনুসারীই ছিল না।

চিন্তা করুন, একজন নবী যিনি সারা জীবন পৃথিবীতে দাওয়াতি কাজ করলেন অথচ শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাক্তিও তার দাওয়াত গ্রহণ করে নি। এটা খুবই কষ্টের। আপনারা জানেন, এটা খুবই হতাশার কথা। যখন আপনি একটি কাজ করে যাচ্ছেন আর দেখছেন তার কোন ফলাফল নেই-ব্যাপারটা অত্যন্ত হতাশার। হযরত নূহ আ. এর কথা একবার কল্পনা করুন। তিনি দিন-রাত দাওয়াতি কাজ করেছেন; দিনের পর দিন। সাড়ে নয়শত বছর অথচ একজনও তাকে সমর্থন দেয় নি। 
এরপরেও টিকে থাকা কিভাবে সম্ভব? কিভাবে লেগে থাকা সম্ভব?
 তিনি কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন? কেননা আমরা যে আন্দোলন করছি তার ফলাফল দেখতে পাচ্ছি। যদি আপনি কিছু করতে থাকেন আর বার বার মানুষ তার বিরোধীতা করতেই থাকে, আপনার দাওয়াত অস্বীকার করতেই থাকে, আপনার বিরুদ্ধে বলতে থাকে, আপনাকে বয়কট করে, আপনাকে আঘাত করে তাহলে এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। কিন্তু আম্বিয়ায়ে কেরামের সাথে এসব কিছুই ঘটেছে।  কিন্তু তাঁদের দাওয়াহ থামেনি। এটি একটি অলৌকিক ব্যাপারও বটে। তাঁদের নবুওতের পক্ষে এটাও একটা মুযিযা!
নূহ আ. এর সাড়ে নয়শত বছর এমনই ঘটেছিল। 

তাই আমরা দেখছি কিয়ামতের দিন একজন নবী হেঁটে যাচ্ছেন অথচ তার সাথে কোন অনুসারী নেই।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘এরপর আমি অনেক মানুষের একটি দল আসতে দেখলাম এবং ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি আমার উম্মতের দল? ফেরেশতা বলল, ‘না, তবে ঐ দিকে তাকান’। ‘আমি দিগন্তরেখায় তাকালাম আর মানুষের বিশাল একটা দল দেখতে পেলাম। তখন জিবরাঈল আ. আমাকে বললেন, তারাই আপনার উম্মত। 

তাদের প্রথম কাতারে আছে ৭০ হাজার এমন সজ্জন ব্যাক্তি যাদের কোন জবাবদিহিতা নেই, তারা কোন শাস্তির মুখোমুখিও হবে না। এ বিশাল দলে ৭০ হাজার এমন লোক থাকবে যাদের সম্পর্কে ইতোপূর্বে বলা হয়েছে। এ হাদীসের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কথা অন্য হাদীসেও এসেছে।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি ফেরেশতাদের সাথে ছিলাম। একজন ফেরেশতা বলল, ঐ দিকে তাকান। আমি ঐ দিকে তাকালাম এবং দেখলাম ঐ দিকে মানুষের ভীড়ে দিগন্ত ঢাকা পড়ে গেছে। এরপর তারা আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলল। আমি অন্যদিকে তাকালাম। সেদিকেও মানুষের ভীড়ে দিগন্ত ছেয়ে গেছে! অসংখ্য মানুষ। অতঃপর আল্লাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুহাম্মাদ সা. আপনি কি সন্তুষ্ট? মুহাম্মাদ সা. বলেলন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ আমি সন্তুষ্ট, আমি সন্তুষ্ট। এরপর তিনি –আল্লাহ- বলেন, আর এ বিশাল মানুষের সাথে সাথে আছে ৭০হাজার এমন সজ্জন ব্যাক্তি যাদের কোন জবাবদিহিতা নেই, তারা কোন শাস্তির মুখোমুখিও হবে না। 
অন্য একটি হাদীসে  রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি আমার উম্মতদের দেখলাম আর তাদের সংখ্যা ও চেহারা দেখে আমি খুবই সন্তুষ্ট। তারা সংখ্যায় যমীন আর পর্বতমালা ভরে দিয়েছে, যেদিকেই আমি তাকিয়েছি তাদের দেখতে পেয়েছি। সমতল, পাহাড় ও পর্বতমালাসহ সব জায়গায় তারা ভীড় করেছিল। 

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি খুবই মুগ্ধ এবং আনন্দিত হয়েছিলাম আমার উম্মতদের দেখে। তাই একটু কল্পনা করুন কিয়ামতের দিন উম্মতের বিশালতা দেখে কত খুশি হবেন আমাদের নবী সা.। আর রাসূলুল্লাহ সা. সত্যিই চান তার উম্মত বিশাল হোক। তিনি অন্য একটি হাদীসে বলেন, বিয়ে কর এবং বেশি বেশি সন্তান নাও কেননা আমি কিয়ামতের দিন এ নিয়ে গর্ব করব। তাই তিনি আমাদের আদেশ করছেন বেশি সন্তান নিতে যাতে করে উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই ইনশা আল্লাহ চলুন আমরা এক বৃহৎ উম্মত তৈরি করি।

রাসূলুল্লাহ সা. এক হাদীসে বলেন, পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম, আদম আ. প্রতিউত্তরে বলবেন, লাব্বাইক, আমি হাযির। 
আপনিই সকল কল্যাণের মালিক। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামের লোকদের বের করে নিয়ে আস। আদম আ. বলবেন, হে আল্লাহ কত মানুষ আনব? আল্লাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালা তাকে বলবেন, প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনকে। 

বিশাল সংখ্যক লোক জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যাই হোক, যখন এভাবে জাহান্নামীদের বের করে আনা হবে, জান্নাতের লোকদের পৃথক করা হবে, এটা নিয়ে তখন সেখানে নবীগণের মধ্যে এক প্রতিযোগিতা চলবে। উত্তম প্রতিযোগিতা।

কার উম্মত বেশি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে, এই প্রতিযোগিতা! 
আপনারা জানেন, মেরাজের রাতে যখন রাসূলুল্লাহ সা. মূসা আ. এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মূসা আ. কেঁদেছিলেন, মনে আছে?
 তিনি কেন কেঁদেছিলেন? মূসা আ. বলেন, তার কারণ, এক যুবককে আমার পরে পাঠানো হয়েছে আর তার উম্মতের সংখ্যা অনেক। তারা আমার আগে জান্নাতে যাবে আর তারপর আমার উম্মত যাবে। তাই সে সময় পর্যন্ত অনুসারীর দিক থেকে তিনি প্রথম ছিলেন। কেননা নবী মুহাম্মাদ সা. এর উম্মতের পর বৃহৎ উম্মত হল বনী ইসরাঈল। আল্লাহ সুবহানুহু ওতায়ালা বলেন, হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।

সেটা সত্যি কথা কিন্তু এটা বলা হত বহু সময় আগে। এক সময় তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিল কারণ তখন তারা সত্যের পতাকাবাহী ছিল; তারা ছিল নবীদের উম্মত; তারা ছিল এমন মানুষ যারা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তারা ছিল প্রথম উম্মত যারা জিহাদ করেছিল। অন্য কোন নবী আ.কে জিহাদ করতে হয়নি; আমি অতীতে জিহাদের ময়দানে শারীরকি যুদ্ধের কথা বলছি।

 এর আগরে নবীদের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তারা  দাওয়াতি কাজ করতেন এরপর কিছু মানুষ ঈমান আনতো, বাকিরা অবাধ্যতায় মতেে উঠতো এবং আল্লাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালা নবীদরে বলতেন তার উম্মতসহ হিজরত করতে তারপর আল্লাহ সুবহানুহু ওতায়ালা সত্য অস্বীকারকারীদের ধ্বংস করে দিতেন আযাবের মাধ্যম। 
কিন্তু হজরত মূসা আ. এর সময় থেকে আল্লাহ সুবহানুহু ওতায়ালা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর নতুন বিধান প্রকাশ করেন। তাই তারা প্রথম জিহাদকারী উম্মত। কিন্তু জিহাদকারী সবচেয়ে মহান উম্মত হল মুহাম্মাদ সা. এর উম্মত।
আমরা স্মরণ করতে পারি 
বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবায়ে কেরামের রা. এর পরামর্শ চাইলে আল-মিকদাদ ইবনে আমর দাড়িয়ে যান এবং তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. আমরা বনী ইসরাঈলের মত বলব না যে ‘মূসা যাও তোমার প্রভুকে সঙ্গে নিয়ে জিহাদ কর; আমরা এখন এখানে অপেক্ষা করব।’ আমরা আপনাকে বলতে চাই ‘যান আপনার প্রভুর ভরসায় লড়াই করুন; আমরাও আপনার সাথে লড়াই করব।’ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কয়েক বছর পর বলেন, আমি ঘটনাটি দেখেছি,  আর তারপর আফসোস করেছিলাম যদি ওই মূহুর্তে সেই লোকটি আমি হতে পারতাম। তিনি বলেন, যখন মিকদাদ ইবনে আমর রা. দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই কথাগুলো বললেন আমি খুবই প্রভাবিত হয়েছিলাম। আমি মনে মনে কামনা করতাম ওই লোকটি যদি আমি হতাম। কেননা সেটা ছিল সঠিক সময়ে বলা বিশেষ কিছু কথা 
আর সুবহানাল্লাহ এটা ছিল প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা যা আজও আমরা স্মরণ করি।
 এটা ছিল রাসূলুল্লাহ সা.কে উৎসাহ দেয়ার মত একটি শক্তিশালী কথা। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবায়ে কেরামের মতামত চাচ্ছিলেন এবং তিনি তাদের কাছ থেকেই শুনতে চাচ্ছিলেন। তাই আপনারা বুঝতেই পারছেন যে নেতা যখন দেখবেন তার অনুসারীরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত তখন তিনি কতটা খুশি হন।

আরেকজন সাহাবী বললেন, আপনি যদি পরীক্ষা নিতে চান নিন। এমনকি আপনি যদি সমুদ্রে যুদ্ধ করতে নামেন আমরাও আপনার সাথে নেমে যাব, আপনাকে অনুসরণ করব। 

আমরা বলছিলাম, যখন আল্লাহ আদমকে ডেকে বলবেন জাহান্নামিদের বের করতে,রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ শেষ বিচারের দিনে ডেকে বলবেন, হে আদম। আদম আ. উত্তরে বলবেন, আপনিই সকল কল্যাণের মালিক। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামের লোকদের বের করে নিয়ে আস। আদম আ. বলবেন, হে আল্লাহ কত মানুষ আনব? আল্লাহ সুবহানুহু ওতায়ালা তাকে বলবেন, প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনকে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, এটা যখন ঘটবে তখন শিশুদের চুল পেকে সাদা হয়ে যাবে আর প্রত্যেক গর্ভবতী নারী অকালপ্রসব করবে এবং দেখবে মানুষ মানবজাতি মাদকাসক্তের মতো আচরণ করছে যদিও তারা মাদকাসক্ত হবে না তারা হবে আল্লাহর অভিসম্পাত প্রাপ্ত। নবীর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী সা. তখন সে পছন্দনীয় একজন কে হবে? 
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, জেনে রাখো যে সে একজন হবে তোমাদের আর নয়শত নিরানব্বই জন হবে ইয়াজুজ-মাজুজদের। এরপর রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যার হাতে আমার জীবন সেই আল্লাহর কসম, জান্নাতের এক-চতুর্থাংশই হবে তোমরা। আমরা চিৎকার দিয়ে বললাম, আল্লাহু আকবার। 
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি আশাকরি যে তোমরা হবে জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ অধিবাসী। সাহাবাগণ বলেন, আল্লাহু আকবর। রাসূলুল্লাহ সা এরপর বলেন, তোমরা হবে জান্নাতের অর্ধেক। সাহাবাগণ বলেন, আল্লাহু আকবর।

তিনি আবারো বলেন, তোমরা মুসলমানেরা অমুসলিমদের তুলনায় একটি সাদা ষাড়ের কালো চুল অথবা একটা কালো ষাড়ের সাদা চুল। সুতরাং কাফিরদের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা কম, কিন্তু জান্নাতবাসীদের মধ্যে অধিকাংশ হবে এই উম্মতের মধ্য থেকে।

এ সংক্রান্ত আরো হাদীস আছে। 

যেমন তিরমীজি শরীফের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, জান্নাতবাসীগণ একশত বিশটি রাস্তায় ভাগ হবে। আশিটি রাস্তা হবে এই উম্মতের। রাসূলুল্লাহ সা. সহীহ মুসলিম শরীফে বলেন, আমি হব জান্নাতের প্রথম মধ্যস্থতাকারী (শাফায়াতকারী) আর নবীগণের মধ্যে কোন নবীই এত অধিকসংখ্যক উম্মতসহ পরীক্ষিত হবেন না যেমন আমি পরীক্ষিত হয়েছি। আমার উম্মত হবে সবচেয়ে বেশি। আর নিশ্চয়ই সেখানে নবীগণের মধ্যে এমন একজন নবী হবেন যিনি তার উম্মতের মধ্য থেকে একজন দ্বারা পরীক্ষিত হবেন। 
আর রাসূলুল্লাহ সা. বুখারী শরীফে বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, প্রত্যেক নবীকে মোজেজা দেয়া হয়েছিল কেননা তারা তাতেই বিশ্বাস করতো কিন্তু আমাকে দেয়া হয়েছে স্বর্গীয় বাণী যা আল্লাহ আমার ওপর নাযিল করেছেন। তাই আমি আশা করি আমার অনুসারীরা সংখ্যায় অন্য নবীর অনুসারীদের ছাড়িয়ে যাবে। কেন? কেননা মুহাম্মাদ সা. এর মোজেজা অন্য রকম। মুহাম্মাদ সা. এর মোজেজা হল কুরআন। যেখানে অন্য নবীদের মোজেজা ছিল একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য সীমিত। কিন্তু মুহাম্মাদ সা. এর মোজেজা শেষ বিচারের দিন র্পযন্ত চলতে থাকবে।

জান্নাতে ট্যুর 

ইনশাআল্লাহু তায়ালা, এখন
 আমরা একটি ট্যুর এ যাব, আসলে বাস্তবে নয়, আমরা সবাই কল্পনা করব যে আমরা জান্নাতে সফর করতে যাচ্ছি, ঘুরতে যাচ্ছি, জান্নাতের বিভিন্ন নাজ নেয়ামত আমরা ঘুরে ঘুরে দেখব| এবং আমাদের পথ দেখানোর জন্য গাইড হিসেবে আমরা একজন ব্যক্তিকে অনুসরণ করব, যিনি আমাদের জান্নাতের সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাবেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের গাইডের সাথে আমরা কোন ক্যামেরা যুক্ত করে দিতে পারছি না, 
কিন্তু আমি চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের যা বর্ণনা দিয়েছেন তা অনুসারে একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার, সুতরাং আমাদের এই সফরের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের কল্পনা শক্তিকে ব্যবহার করব, আমরা মনে করব, যিনি আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং জান্নাতের সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, আপনি নিজেই। আমরা আপনাকে অনুসরণ করে আপনার সাথে জান্নাতে ঘুরতে যাচ্ছি, কাজেই আপনি চিন্তা করবেন যে, আমরা যে যে স্থানের বর্ণনা দিচ্ছি, আপনি নিজে সেখানে আছেন, এ কাজে আপনি আপনার চিন্তা শক্তি ব্যবহার করুন।

 কেননা এটা আপনার জন্যই ভাল। এটা খুবই উপকারী। আপনি যত জান্নাতের সাথে সম্পৃক্ত হবেন ,আশা করবেন, যত জাহান্নামকে ভয় করবেন, ততই আপনি আল্লাহর নিকটবর্তী হবেন।

আল্লাহ বলেন,  ‘তারা তাদের পালনর্কতাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় (৩২-১৬)।” তাই তারা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে এবং আল্লাহর ‘আজর’ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে।
 
ইবনে কায়্যিম বলেন, একজন মুমিন বান্দা হিসেবে, একজন বিশ্বাসী হিসেবে আপনাকে দুই ডানাওয়ালা একটি পাখির মত হতে হবে। একটি ডানা ‘রজাআ’ অর্থ্যাৎ আল্লাহ সুবহানুহু ওতায়ালার সন্তুষ্টির প্রত্যাশা, আর অন্য ডানা হল খাওফ- আল্লাহর ভয়। আর এদুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। শুধূ খালেস সন্তুষ্টির প্রত্যাশা অথবা খালেস মনের ভীতি থাকাই যথেষ্ট হবে না; দুটোরই ভারসাম্য থাকতে হবে। তাই আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালার কাছে এর প্রতিদান আশা করুন এবং আল্লাহর আযাবের ভয় করুন। 

কেন? কারণ, আপনি যদি খুব বেশি প্রতিদান আশা করেন তাহলে এটা আপনাকে অলস করে দেবে এবং আল্লাহর প্রতি আপনার ইবাদতে গতি সঞ্চার করবে না, গতিহীন করে দেবে, আপনি নিষ্ক্রিয় বসে থাকবেন। কারণ বেশি আশা করার ফলে আপনি মনে করবেন আমি যাই করি না কনে, আল্লাহ তো আমাকে ক্ষমাই করে দিবেন!

আবার বিপরীতভাবে আপনি যদি অত্যাধিক ভীত হন, সবসময় শুধু শাস্তির ভয়ে ভীত থাকেন, তবে সবসময় মনে হবে আমিতো ভাল না; আমি ব্যররথ হব; আমি পাশ করব না; আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন। এ ভাবনা আপনাকে অস্থির করে তুলবে এবং হতাশায় নিমজ্জিত করে দিবে; এবং [শেষ র্পযন্ত] আপনি [হয়ত ইবাদতই] ত্যাগ করবেন, হাল ছেড়ে দিবেন। তাই আপনাকে দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। 

আর তাই কল্পনা করুন যে আপনি একটি দলের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন; 
আর জান্নাত সত্যিকারের বিস্ময়কর জায়গা; বিস্ময়ে ভরপুর, দুনিয়াতে মানুষের তৈরি করা ওয়ান্ডারল্যাণ্ডের কথা আপনারা শুনেছেন, কিন্তু সত্যিকারের ওয়াণ্ডারল্যাণ্ড হচ্ছে জান্নাহ, যার প্রতিটি সূক্ষ্ম বিষয় চমকে ভরপুর| এবং আপনার কল্পনাশক্তি যত ভালোই হোক না কেন,
আপনি কখনোই চিন্তা করতে পারবেন যা, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে কত উত্তম জিনিস আপনাকে দিতে যাচ্ছেন।
“কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে”। (৩২-১৭)

সুতরাং আমাদেরকে জান্নাতে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যিনি, তাকে অনুসরণ করতে যাচ্ছি,  
এই মানুষ আপনি, আমরা আপনাকে অনুসরণ করছি, জান্নাতে প্রবশেরে জন্য আপনি একটি ব্রিজের উপর আছেন, এটা আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে, একমাত্র মহাসড়ক যা আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর ব্রীজ পার হবার সময় আপনাকে থামানো হবে;
 দুনিয়াতে আপনি সেসব মুসলিমদেরকে চিনতেন এরা এসে আপনাকে থামিয়ে দিয়েছে, এবং আপনি তাদের কাছে ঋণী, তারা আপনার কাছে পাওনা দাবি করছে, হতে পারে এই পাওনা আর্থিক,  অথবা আপনি কাউকে কষ্ট দিয়েছেন, আঘাত করেছেন কিংবা আহত করেছেন, খারাপ কথা বলে কষ্ট দিয়েছেন তারা এসে আপনাকে থামিয়ে দিয়েছে, এবং এই দাবীদার সবাইকে একত্রিত করা হবে, এবং প্রতিটি পাওনা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে, সুতরাং এর মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের আগে আপনাকে পরিশুদ্ধ করা হবে, সকল দেনা থেকে মুক্ত করা হবে, যদি আপনি পৃথিবীতে কাউকে একটি চড় মেরে থাকেন ওই ব্রীজে আপনি তা ফেরত পাবেন। 

কারো সম্পর্কে কটু কথা বলে থাকলে ওই ব্রীজে আপনাকে তা ফেরত পেতে হবে। কারণ, আল্লাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালা পবিত্র আর তিনি পবিত্রতা ব্যতিত কোন কিছু গ্রহণ করবেন না। কেননা, জান্নাত পবিত্র আর কেউই পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ না হওয়া র্পযন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না । ১০০% বিশুদ্ধ না হয়ে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

আর এই পরিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া দুনিয়াতেই শুরু হয়। কোন দুঃখকষ্ট যা মানুষ পৃথিবীতে ভোগ করে তা তার কিছুটা গোনাহ কাটিয়ে দেয়। এটা আপনাকে পরিশুদ্ধ করবে,  আপনার অসুস্থতা ও ক্ষয়-ক্ষতি যা আপনি দুনিয়াতে ভোগ করেন; তাই আপনার পরিশুদ্ধিকরণ। এরপর ‘সাখারাতুল মউত’ ‘মৃত্যু-যন্ত্রণা’ সেটাও আপনার পরিশুদ্ধিকরণ। কোন আজাব যা আপনি কবরে সহ্য করবেন তাও আপনার পরিশুদ্ধিকরণ। শেষ বিচারের দিনে অপেক্ষার সময়কাল যা হবে ৫০ হাজার বছর তা আপনার পরিশুদ্ধকরণের একটি প্রক্রিয়া। এরপর আছে এই পুলসিরাতের ব্রীজ, যেখানে  জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে আপনাকে আপনার দাবীদাররা থামিয়ে দেবে এবং তাদেরকে তাদের পাওনা দেবার মাধ্যমে আপনি পরিশুদ্ধ হবেন।

পরিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনি জান্নাতের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন
 আর আমরা ইতিপূর্বে জান্নাতের দরজাগুলো কেমন হবে প্রশস্ততা কেমন হবে,  কে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে কিভাবে প্রবেশের সময় তাদেরকে ফেরেশতারা সাদর সম্ভাষণ জানাবেন এগুলো গত র্পবে আলোচনা করেছি।
 
বুখারী শরীফের এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, দুনিয়াতে যেভাবে তোমরা তোমাদের ঠিকানা চিনতে সেখানে তার চাইতেও ভাল করে তোমাদের বাসস্থান চিনবে। জান্নাতে আপনার ঠিকানা খুঁজে পেতে আপনার কোন ভ্রমণ সহযোগী দরকার হবে না; কোন নির্দেশনারও প্রয়োজন পড়বে না; আপনার কোন বন্ধুকেও ফোন করে আপনার বাসস্থান সম্পর্কে জানতে হবে না। 

স্বাভাবিকভাবেই আপনি জানতে পারবেন কোথায় অবস্থান করবেন। কারণ আপনি হলেন একজন আদম সন্তান। আর আদম আ., তার বাসস্থান, আদি বাড়ি ছিল জান্নাত। আদম আ. পৃথিবীতে কোন দেশ বা জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না; তার কোন জাতীয়তা ছিলনা। আদম আ. এ নিয়ে কোন অহংকার ছিল না যে তিনি এ পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট, ‘আমি এই দেশের নাগরিক, আমারদেশ শ্রেষ্ঠ দেশ ইত্যাদি কিছু ছিলো না, তিনি একজন বিশ্ব নাগরিক, কাজেই আমরা আদম সন্তান আমরাও এই সারা বিশ্বের নাগরিক, কিন্তু র্দুভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক কারণে আমরা নিজেদের বিভিন্ন কৃত্তিম জাতি আর নাগরকিত্বে বিভক্ত করে নিয়েছি। আদম আ. কখনো নাগরকিত্ব নিয়ে অহংকার করেন নি। তিনি ঐরূপ অহংকার কখনই করতেন না কেননা তার আসল বাসস্থান হচ্ছে জান্নাত। দুনয়িাতে আসা, অবস্থান করা ছিলো  আদমের আ. জন্য শাস্তি ! অথচ আমরা দুনিয়াকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ছি ! 

কাজেই আদম আ. জান্নাতে ফিরে যাবেন , তিনি জান্নাতের নাগরিক, আর তার সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল নেককার, তাদের বাসস্থানও জান্নাত। তাই এ পৃথিবী ছিল তাদের জন্য একটি ক্ষণস্থায়ী জায়গা।

তারা ছিলেন মুসাফির,রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, পৃথিবীতে একজন মুসাফিরের মতই থাক। আপনি দুনিয়া থেকে চলে যাবেন, এখানকার অস্থায়ী বাসিন্দা, কাজেই এই পৃথিবীর কোথায় কি আছে সবকিছু জানা প্রয়োজন নেই। কিন্তু হ্যাঁ, আপনি আপনার দুনিয়ার ঠিকানা সম্পর্কে জানেন অথচ এটা আপনার জন্য একটি অস্থায়ী জায়গা। মূলত আপনি জান্নাতের বাসিন্দা এবং পৃথিবীতে আপনার বাড়ির পথ ঘাট ঠিকানা জানার চেয়েও সহজভাবে জান্নাতে আপনার ঠিকানা আপনি চিনতে পারবেন। সহজাতভাবে, ফিতরাগত ভাবইে আপনার অন্তর সেখানে আপনাকে নির্দেশনা দিবে, কারো কাছ থেকে পথ দেখে নিতে হবে না, কারো ফোন নাম্বার লাগবে না। আপনি নিজেই আপনার প্রাসাদে পৌছে যাবেন।

এবারে আপনি যখন সেতু পার হয়ে জান্নাতে প্রবশে করলেন, আপনার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। আপনি হাশরের ময়দান, শেষ বিচারের দিনে বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন; বছরের পর বছর –  ৫০০০০ বছর ধরে। সূর্যের প্রচন্ড তাপে কষ্ট করছেনে, কোন খাদ্য ছিলোনা, পান করার কিছু ছিলোনা; প্রচন্ড গরম। তাই আপনি এখন খুবই ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত। যেইমাত্র আপনি জান্নাতের দরজা খোলা পেলেন এর ভেতর ঢুকে পড়লেন। এবার আপনার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হব। 

তাহলে আসুন জেনে নেই  জান্নাতে আপনার প্রথম খাবার আর পানীয় কি হবে।

আপনি ভোজ শুরু করবেন হালকা খাবার দিয়ে, শুরুতে হালকা খেয়ে ক্ষুধাটা একটু চাঙ্গা করে নিন, এরপর যাবেন মূল খাবারে এরপর আসবে এক ধরনের পানীয়। আর স্মরণ করুন আপনি খুব ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত তাই এটা হবে আপনার জীবনে খাওয়া সবচেয়ে মজাদার খাবার, উপরন্ত এটা জান্নাতরে খাবার, সুতরাং সহজইে বুঝতে পারছনে এই খাবার কত মজার ও সুস্বাদু হব। হালকা খাবারটা হবে মাছের কলিজা। আমি জানি না দুনয়িার খাবারগুলোর মধ্যে মাছ আপনাদের প্রিয় কিনা, তার উপরে আবার এটা মাছের কলিজা।  কিন্তু এটা মনে রাখবেন এটা জান্নাত, যা কিছুই খেতে দেয়া হবে তা উত্তম। তাই রাসূলুল্লাহ সা. মাছের কলিজা সম্পর্কে বলেছেন অতিরিক্ত বা বর্ধিত অংশ, তিমি মাছের কলিজা। কাজেই, বিশ্বাস করুন এটা সত্যি খুব মজার হবে।

আর সেটা হবে হালকা খাবার। আর এরপরই আসবে মূল খাবার। হাদীসে বলা হয়নি যে এটাই মূল খাবার তবে বলা হয়েছে সেটা হবে একটি ষাঁড় বা অল্প বয়সী জন্তু বা বাছুর। এখন সেই ষাঁড়টি কোথায় আছে? 
এখন সে জন্তু জান্নাতে রয়েছে। এবং জান্নাতের ঘাস খাচ্ছে। এখন সে জান্নাতে মনের আনন্দে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। আপনাকে খাওয়ানোর জন্য সে নিজেকে খাওয়াচ্ছে, এটা মোটা তাজা হচ্ছে।  আর জান্নাতে এটাকে খাওয়া হবে, রানের মাংস থেকে।

আর নবীগণের একটি ঐতিহ্য হিসেবে, যখনই তারা কোন অতিথি পেতেন 
যদি তাদের যবেহ করার মত কোন প্রাণী থাকত তারা তাদের অতিথিদের সম্মানে তা যবেহ দিতেন। হযরত ইবরাহীম আ. এর মত যেমনটি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তিনজন অতিথি পেয়েছিলেন। তিনি তাদেও সাথে কেমন আচরণ করেছিলেন? তিনি তাদের জন্য একটি বাছুর জবাই দিয়েছিলেন এবং রোস্ট করে গোশত খাইয়েছিলেন। তাই নয় কি? আল্লাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালা সেই বাছুর  সম্পর্কে বলেছেন, তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন 
এবং এটা রোস্ট করা। এটা হল সেই খাবার যা সাইয়্যেদিনা ইবরাহীম আ. তার অতিথিদের খাইয়েছিলেন। তাই আপনি যখন কিছু একটা জবাই করেন তখন সেটা আপনাদের অতিথিদের সম্মান জানানোর একটি নমুনা।

 তাই যখন আপনারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন আর জান্নাতে আপনারা প্রথম মেহমান; আপনাদের জন্য ফেরেশতারা এই বিশেষ খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই এই বাছুর যেটা জান্নাতে আপনাদের জন্য দীর্ঘদনি ধরে জান্নাতে চরানো হয়েছে সেটা খাওয়ানো হবে তা যবাই করা হবে এবং আপনারা এর গোশত প্রথম খাবার হিসেবে মজা করে খাবেন। 

আর আপনি কী পান করবেন?  পানীয় যা আপনারা এই প্রথম খাবারের সাথে খাবেন তা হবে ক্লান্তি অবসাদ দূরকারী এক র্ঝণা থেকে যার নাম সালসাবিল। এই র্ঝণার পানইি আপনারা খাবারের সাথে পান করবেন। সালসাবিল কীরূপ এ ব্যাপারে আপনার কোন ধারণা নেই। নাম শুনে ভালোই মনে হচ্ছে এবং স্বাদও হবে চমৎকার।

এ সর্ম্পকে হাদীসটি আছে মুসলিম শরীফে। ছাওবান, রসুলুল্লাহ (সঃ) এর মুক্ত করা দাস  বলেছেন, যখন আমি আল্লাহর রসুল (সঃ) এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন একজন ইহুদি পন্ডিত রসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে এসে বলল  আসসালামু আলাইকুম ইয়া মুহাম্মাদ !
তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মুহাম্মদ! 
এ কথা শুনে, আমি তাকে সজোরে ধাক্কা দিলাম, যার ফলে সে  প্রায় পড়ে যায় এমন একটা অবস্থা।
 তখন ইহুদি পন্ডিত জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে কেন ধাক্কা দিলে? 
আমি বললাম, তুমি কেন আল্লাহর রাসূল বলে সম্বোধন করনি? এই ইহুদি আবেদ রসুলুল্লাহ (সঃ) কে শুধু মোহাম্মদ বলেছে আল্লাহর রাসুল বলেনি, তাই থাওবান(রা) রাগন্বিত হয়ে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল। তখন ইহুদি পন্ডিত বলল, আমরা তাকে তার পরিবার যে নাম দিয়েছিল সেই নামেই ডাকি, তার পরিবার তাকে মোহাম্মদ নাম দিয়েছে, তাই আমি তাকে মোহাম্মদ বলে ডেকেছি। 

রসুলুল্লাহ (সঃ) উনার ভদ্রতা ও দয়ার খাতিরে  বললেন, হ্যাঁ আমার পরিবার আমাকে মোহাম্মদ নাম দিয়েছে, আমার নাম মোহাম্মদ, তুমি আমাকে মোহাম্মদ ডাকতে পার। 

তারপর ইহুদিটি বলল আমি আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য এসেছি। রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, যদি আমি তোমাকে এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেই তাহলে এগুলো কি তোমার কোন উপকারে আসবে? 

রসুলুল্লাহ (সঃ) বুঝতে পেরেছিলেন যে এই লোকটি উনার সাথে বিতর্ক করতে এসেছে, তাই উনি জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার কোন কাজে আসবে, উপকারে আসবে? যদি আমি তোমাকে উত্তর দেই, এগুলো কি তোমার কোন উপকারে আসবে? তখন ইহুদি বলল, আমি নিশ্চিত না যে আমার উপকারে আসবে কি না, কিন্তু আমি গুরুত্ব সহকারে উত্তরগুলো শুনবো। 

তখন রাসুলুল্লাহ সা) এর হাতে একটি লাঠি ধরা ছিল, এবং এটা বালির দিকে তাক করা ছিল, সে অবস্থায় রাসূল সা) বললেন,
আচ্ছা ঠিক আছে, বল, প্রশ্ন কর
। তখন ইহুদি পন্ডিত বলল, যখন পৃথিবী ও আসমান পরিবর্তিত হয়ে যাবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে? সে বিচার দিবসকে উদ্দেশ্য করে এ প্রশ্ন করেছিল, যে ওইদিন মানুষ কোথায় থাকবে? (১)তখন রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন , মানুষ ব্রিজের পাশে অন্ধকারে থাকবে, সিরাতাল মুস্তাকিমের (পুলসিরাত হতে পারে) পাশে  থাকবে। 

ইহুদিটি জিজ্ঞেস করল, মানুষের মধ্যে কে সর্বপ্রথম এই ব্রিজকে পাড়ি দিবে? (২)
 রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন – ফুকারা আল মুহাজিরুন-গরিব মুহাজিরিনগণ। আমরা এ ব্যাপারে আগেই কথা বলেছি। 

ইহুদিটি বলল, তারা কি দিয়ে নাস্তা খাবে? (৩) 
যদিও নাস্তা বা হালকা খাবার বলে অনুদিত হয়েছে মুল আরবি হচ্ছে তোহফাত, যা আসলে ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য খাওয়া হয় এমন কিছু বুঝায়। অর্থাৎ ইহুদি লোকটি জিজ্ঞেস করছিল, তাদের প্রথম খাবার কেমন হবে?? রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, মাছের কলিজা। 

ইহুদি জিজ্ঞেস করল, এরপর তাদের খাবার কি হবে? (৪) 
উত্তরে রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, জান্নাতের বিভিন্ন বাগানে চড়ানো একটি ষাড় তাদের জন্য জবাই করা হবে। 
এই ষাড়গুলো জান্নাতের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘাস লতা  খেয়ে বড় হয়েছে, সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই খাবার কত মজাদার হবে!! ইহুদিটি জিজ্ঞেস করল, তাদের খাবার পানীয় কি হবে? (৫) 
উত্তরে রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তাদেরকে একটি ঝর্ণা থেকে পান করার জন্য পানীয় দেয়া হবে। যার নাম সালসাবিল 

আমরা আগেই বলেছি, আপনাদেরকে কল্পনা করতে যে, আপনারা জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। আমরা কাল্পনিক ভ্রমনে আছি, সুতরাং আপনি জান্নাতে প্রবেশের পর আপনাকে আপ্যায়ন করা হল। আপনি জান্নাতের প্রথম খাবার এবং প্রথম পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছেন।

এবারে আমরা আপনার স্থায়ী সম্পত্তিগুলো ঘুরে দেখব, আপনার স্থাবর সম্পত্তিসমূহ। 

আপনার সহজাত প্রবৃত্তিই আপনাকে জান্নাতের বিভিন্ন পথে
 আপনার স্থায়ী আবাস ও সম্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। এ পথে যেতে যেতে চারপাশের বিষ্ময়কর সৌন্দর্য আমাদের অভিভূত করল, শ্বাসরুদ্ধকর আশ্চর্যরকমের সব দৃশ্য! এবং এগুলো দেখতে দেখতে আপনিও অভিভূত ! 
পথ চলতে চলতে এই অস্বাভাবিক সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি এখন চলে এসেছেন একটি সুন্দর রাজপ্রসাদ এর সামনে, স্থাপত্যশিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন! 
যা দেখে আপনি আগের চেয়েও মুগ্ধ !  এবং আপনাকে বলা হবে এসবগুলোই আপনার! 


“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের। (আনকাবুত ৫৮)

এবং প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আপনি যে রাজপ্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে এবং জান্নাতের যা যা ঘুরে দেখছেন এর সবই হচ্ছে আপনি জান্নাতের যে লেভেল বা স্তরে আছেন, সেই স্তরের নিয়ামতসমূহ। কাজেই, আমরা জান্নাতে আমাদের স্তরের দিকে পরিচালিত হব, কারন আমরা জানি যে জান্নাতের অনেকগুলো স্তর আছে। জান্নাত বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা শুধুমাত্র একটা স্তরে নয়, যেখানে সবাই সমান এমন নয়-জান্নাতের অনেকগুলো স্তর আছে, আল্লাহ (সুব) বলছেন “দেখুন, আমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্তবায় শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতে শ্রেষ্ঠতম”। (১৭-২১)

আল্লাহ (সুব) এখানে বলতেছেন যে , আমরা মানুষদের মধ্যে এমনভাবে নিয়ামত বণ্টন করেছি যাতে তারা বিভিন্ন নিয়ামতের দিক থেকে বিভিন্ন অবস্থানে আছে, সম্পদের দিক থেকেও ভিন্ন, কেউ গরিব কেউ ধনি, কেউ স্বাস্থবান কেউ স্বাস্থহীন, কেউ সবল, কেউ দুর্বল। আল্লাহ (সুব) রিযিক কে মানুষের মাঝে বিভিন্নভাবে বন্টন করেছেন, এবং এ দুনিয়ার মানুষজনও বিভিন্ন স্তরে বসবাস করে। কিছু মানুষ অন্যের কাজ করে আবার কিছু মানুষের কাজ অন্যরা করে দেয়। আল্লাহ (সুব) এ দুনিয়ার বিভিন্ন মানুষের মধ্যে নিয়ামত বিভিন্ন পরিমানে বন্টন করেছেন, আল্লাহ বলেছেন যেভাবে এ দুনিয়ায় মানুষের মাঝে ভিন্নতা আছে, তেমনিভাবে জান্নাতের লোকদের মধ্যেও বড় ধরনের ভিন্নতা থাকবে। 

এ দুনিয়ায় লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন স্তরভেদের পার্থক্য, এটাকেই আমরা কত বড় করে দেখি !
 মাঝে মাঝে আমরা বলি যে কিছু লোকের কিছুই নাই আবার কিছু লোকের সবই আছে, কিন্তু জান্নাতের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পার্থক্য আরও আরও অনেক বেশি হবে, রসুলুল্লাহ (সঃ) একটি হাদিসে বলেছেন যে, নিচের স্তরের জান্নাতবাসিগন উপরের স্তরের জান্নাতিদেরকে এমনভাবে দেখবে যেভাবে আমরা আকাশের তারা দেখি, 
এটাই হচ্ছে জান্নাতের স্তরের মধ্যে পার্থক্য, কেননা জান্নাত হচ্ছে বিশাল । 

আমরা এই দুনিয়ার স্তরভেদের কারণে এই সীমিত সম্পদ এর জন্যেও জীবন দিয়ে যুদ্ধ করছি, একে অপরকে হত্যা করছি, ছোট্ট একটা স্থানে, যেখানে সবকিছু সীমিত। অথচ, জান্নাতের এই স্তরভেদ হবে আরও বিশাল, কিন্তু সেই প্রতিযোগিতার দিকে আমরা উদাসীন, জান্নাতের উঁচু উঁচু মর্যাদাপূর্ণ স্থানগুলোতে আমাদের আসন পাকা করে নেয়ার জন্যেই তো উচিত প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা, এটা আসল প্রতিযোগিতা, একারণেই আমরা দেখতে পাই,
আল্লাহ (সুব) পবিত্র কোরআনে বলেছেন
 

আল্লাহ সুব বলছেন যে, জান্নাতে প্রশস্ততা, শুধুমাত্র প্রশস্ততা, দৈর্ঘ্য নয়, প্রশস্ততাই হবে আসমান আর যমীনের সমান, তাহলে এর আকার কত বিশাল হবে!

 আল্লাহ (সুব) ৭টি আসমান সৃষ্টি করেছেন, আমরা সর্বনিম্ন স্তরের আসমানে বসবাস করছি।  এটা হচ্ছে দুনিয়ার স্তরের আসমান, সামা আদ দুনিয়া। এই আসমান এর উপরের আসমান এর তুলনায় মরুভুমির মাঝে একটি আঙটির মতো। 

এবং আমরা যে আসমানে বসবাস করি সেটা কত বড়, আপনারা কি জানেন? প্রত্যেক তারকা যাদেরকে আমরা দেখতে পাই, প্রত্যেক সৌরজগত, গ্যালাক্সী, আমরা যাদের সম্পর্কে জানি, প্রত্যেকটিই সর্বনিম্ন আসমানের মধ্যেই আছে, আল্লাহ সুব বলেছেন, আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; (৬৭-৫) 

সুতরাং আমরা যেসকল নক্ষত্র সম্পর্কে জানি সেগুলো সবই সর্বনিম্ন স্তরের আসমানে আছে। এবং আমরা এই সর্বনিম্ন স্তরের আসমানের বিশালতা বুঝাতে গিয়ে দূরত্ব হিসাব করছি, মহাকাশবিদ্যার দূরত্বের মাধ্যমে, আমরা সাধারণ মাইল বা কিলোমিটার একক ব্যবহার করছি না, কারণ আপনারা জানেন জ্যোতিবিদ্যায় দুরত্ব মাইল বা কিলোমিটার ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয় না, আলোকবর্ষ ব্যবহার করা হয়। কারণ, মহাকাশের দূরত্বের ক্ষেত্রে এর বিশালতা এত বেশি যে, এক্ষেত্রে মাইল এককে কিংবা কিলোমিটার এককে দূরত্ব হিসাব করাটা অর্থহীন, প্রতিটি এককের পরে আমাদেরকে অনেকগুলো শূণ্য বসাতে হবে, কাজেই এটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। বিশাল বড় সংখ্যা আসবে। তাই এ দুরত্ব আলোকবর্ষ এককে মাপা হয়। আলো এক বছরে যতটুকু পথ পাড়ি দেয়, যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে সেটাই হল এই মহাকাশ বিদ্যার দূরত্ব মাপার একক।

উদাহরণস্বরূপঃ আলোকবর্ষের এককে সুর্য আমাদের কত কাছে? সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কত সময় লাগে? আট মিনিটের কাছাকাছি। আর সূর্য বাদে সবচেয়ে নিকটবর্তি তারকাটি আমাদের কত কাছে? সবচেয়ে নিকটবর্তী তারকাটি আমাদের থেকে প্রায় সোয়া চার আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ আলো ওই তারকা থেকে আমাদের কাছে আসতে সোয়া চার বছর সময় নেয় ! 

আপনারা জানেন, আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা ৩০০ হাজার কিলোমিটার, অর্থাৎ আলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা ৩০০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমন করে, প্রতি সেকেণ্ডে! এরপরও আলো ওই নিকটবর্তী তারকা থেকে আমাদের কাছে আসতে সোয়া চার বছর সময় নেয়, এবং এমন বহু নক্ষত্রও আছে যারা পৃথিবী থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, তাদের কাছ থেকে আলো আমাদের কাছে আসতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর সময় লাগে, এবং এর সবই  হচ্ছে আস সামা আদ দুনিয়া 
সর্বনিম্ন আসমান, আর এই এত কিছু নিয়ে এই সর্বনিম্ন আসমান এর ঠিক উপরের আসমানের তুলনায় মরুভুমির মাঝে আংটির মতো!

২য় আসমান তার পরবর্তি আসমানের তুলনায়, মরুভুমির মাঝে আঙটির মত। ৩য় আসমান ৪র্থ আসমানের তুলনায় মরুভুমির মাঝখানে আঙটির মতো, এভাবেই সপ্তম আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত। আর ৭ম আসমান আল্লাহর কুরসি এর তুলনায় মরুভুমির মাঝখানে আংটি স্বরুপ।  আর আল্লাহর কুরসি, আল্লাহর আরশের তুলনায় বিশাল মরুভুমির মাঝখানে ছোট্ট একটি আংটির মতন। 
এবং আল্লাহ (সুব) বলছেন, জান্নাতের বিশালতা সম্পর্কে বুঝাতে গিয়ে, ‘জান্নাতের প্রশস্ততা সমস্ত আসমান ও জমিনের সমান’। 
তাহলে জান্নাতের বিশালতার সাথে এই দুনিয়া কত ক্ষুদ্র সেই তুলনা আমরা না হয় নাই করলাম, শুধুমাত্র প্রথম আসমানের সাথে তুলনা করলেই আমরা দেখতে পাই, এই পৃথিবী যা নিয়ে মানুষের মধ্যে এত মারামারি হানাহানি, যুদ্ধ, সম্পদ দখলের জন্য লড়াই, অথচ এই দুনিয়া কত সামান্য ! কত ক্ষুদ্র, একটি বিন্দু সমপরিমানও নয় ! 
অথচ আল্লাহ (সুব) জান্নাতে মুমিনদের জন্য যে উপহার প্রস্তুত করে রেখেছেন তার তুলনায় এগুলো কিছুই না। 

সুতরাং, এখানে জান্নাতের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে আমরা বিশাল ব্যবধান দেখতে পাই। আর আল্লাহ (সুব) শক্তিশালী মুমিনদেরকে দুর্বল মুমিনদের তুলনায় বেশি দিবেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘একজন শক্তিশালী মুমিন  দুর্বল মুমিনের তুলনায় ভাল এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, যদিও এদের দুজনের মধ্যেই মঙ্গল আছে’। 

সুতরাং উভয়ের মধ্যেই খায়ের আছে, কল্যাণ আছে, শক্তিশালী মুমিনও ভাল, দুর্বল ঈমানদারও ভাল, কিন্তু শক্তিশালী ঈমানদাররা দুর্বল ঈমানদারদের চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়, এবং স্বাভাবিকভাবে
এটাই প্রত্যাশিত যে, আল্লাহ (সুব) শক্তিশালী মুমিন দেরকে অধিক পরিমাণে দিবেন।

রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমলের তারতম্যের কারণে, জান্নাতের এক স্তরের অধীবাসী তার উপরের স্তরের অধিবাসীদেরকে এমনভাবে দেখবে যেভাবে  তোমরা পুর্ব ও পশ্চিম আকাশের উজ্জ্বল তারকাকে দেখ। নিম্ন স্তরের অধীবাসীরা উপরের স্তরের অধিবাসীদেরকে তারকার মত দেখবে যা তাদের থেকে অনেক দূরে। কারণ দুনিয়াতে তাদের কাজের মধ্যেও ব্যবধান ছিল। তাই দুনিয়াতে একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা আখিরাতে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করবে।  দুনিয়ার সামান্য একটা ভাল কাজের জন্য আপনি দেখবেন যে আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। তাই ছোট একটা ভালকাজ পৃথিবী ও সুর্যের দুরত্বের মত ব্যাবধান তৈরি করতে পারে !
 
রসুলুল্লাহ (সঃ) হাদিসে বলেছেন যে, যে সকল ব্যক্তি দুনিয়াতে কোরআন মুখস্ত করবে, তাদেরক, তারা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন কোরআন তেলোয়াত করতে বলা হবে, প্রত্যেক আয়াত তেলোয়াতের সাথে সাথে জান্নাতে তাদের অবস্থান একস্তর বেড়ে যাবে। 
তাই একটিমাত্র আয়াত দুই স্তরের মধ্যবর্তী ব্যবধান তৈরি করবে!

 একটিমাত্র আয়াত মুখস্ত করতে কতটুকু সময় লাগে? অল্প কিছু মিনিট.. তাই দুনিয়ার খুব ছোট একটি কাজ আখিরাতে বিশাল রুপ ধারন করবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনারা লিভার সম্পর্কে জানেন,  যে যন্ত্রে একটি সামান্য পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হবে আর অপর পাশে এই বল বিবর্ধিত হয়ে বিশাল আকার ধারণ করবে। পদার্থবিজ্ঞানে আপনারা এই সম্পর্কে স্মরণ করতে পারেন। আখিরাতেও বিষয়টা এরকম হবে, দুনিয়ার সামান্য ভালো কাজের কারণে আখিরাতে বিশাল পার্থ্যক্য সৃষ্টি করে দেয়া হবে। 


এবং আল্লাহ (সুব) কোরআনে বলেছেন যে, জান্নাতে এরকম পার্থক্য থাকবে।

 আল্লাহ (সুব) সুরা আর রহমানে দুটি গ্রুপ সম্পর্কে বলেছেন। যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দু’টি উদ্যান।’ (৫৫-৪৬) এরপর আল্লাহ এই দুটি বাগানের  বর্ণনা দিয়েছেন, 

তারপর আল্লাহ (সুব) ভিন্ন স্তরের জান্নাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, ‘এই দু’টি ছাড়া আরও দু’টি উদ্যান রয়েছে। (৫৫-৬২)

তাই জান্নাতে উচ্চ স্তর ও তাদের নিচে নিম্ন স্তর থাকবে। 


তো কোনটি সবচেয়ে উচু স্তর? আর কোনটি সবচেয়ে নিম্ন স্তর? 

প্রথমেই আমরা সবচেয়ে নিম্ন স্তর সম্পর্কে আলোচনা করব। মুসা আলাইহিওয়াসাল্লাম আল্লাহকে এই প্রশ্ন করেছিল, ‘ও আল্লাহ আমাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর ও সর্বনিম্ন স্তর সম্পর্কে বলুন’। জান্নাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্তরের পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন সনদের বিভিন্ন হাদিস আছে, এ সবগুলোই সহীহ হাদিস।

 যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে, রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, সর্বশেষ যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে, সর্বশেষ ব্যক্তি, 
(শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন তাকে কত বছর জাহান্নামের আজাব সহ্য করতে হবে), এই ব্যক্তিকে যখন জাহান্নাম থেকে বের করা হবে তার আগেই জান্নাতের সকল অধিবাসিরা জান্নাতে প্রবেশ করেছে, এবং তারা বছরের পর বছর কাটাতে থাকবে, হতে পারে হাজার হাজার বছর বা হতে পারে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর, শুধুমাত্র আল্লাহ (সুব)ই জানেন। 

অতএব জান্নাতিরা যখন অনেক সময় ধরে জান্নাতে থাকবে তখন এই ব্যক্তি  জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে। সে কোন রকমে জাহান্নাম থেকে বের হয়েছে, তার এত বেশি পাপ ছিল যে সে জাহান্নামে অনেক অনেক দীর্ঘ সময় যাবৎ ছিল। একেবারে শেষে আল্লাহ (সুব) তাকে জাহান্নাম ত্যাগ করার অনুমতি দিবেন, এই ব্যক্তিটি জাহান্নামে অনেকদিন আযাব ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে, এবং সে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করবে। সে এখনও জান্নাতে প্রবেশ করে নি। সে জাহান্নাম থেকে বের হওয়াতেই অনেক খুশি, যদিও সে জান্নাত বা জাহান্নাম কোথাও নেই। তারপরও সে অনেক খুশি। 

কিন্তু যেহেতু আমরা মানুষ, তাই আমরা লোভি। আমরা সব সময়ই যা আছে তার চেয়ে বেশি চাই। তারপর এই ব্যক্তি্কে দূর দিগন্তে আল্লাহ (সুব) একটি গাছ দেখাবেন। এই ব্যক্তিটি যে স্থানে ছিল ওই স্থানটা পতিত ভুমি যেখানে কিছুই জন্মায় না। স্থানটা জাহান্নামের খুবই কাছাকাছি তাই জাহান্নামের তাপ এই ভুমিকে ধংস করে দিয়েছে, যদিও এটা জাহান্নামের কোন অংশ নয়। আল্লাহ (সুব) এ স্থান থেকে কিছু দূরে একটি গাছ দেখাবেন। 

যদিও এই লোকটি জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানের স্থানে ভালই ছিল, তারপরও  এই গাছ দেখে আল্লাহ (সুব) কে বলবে ‘ও আল্লাহ আপনি কি আমাকে দয়া করে ওই গাছের নিচে যেতে দিবেন? যাতে আমি এ গাছের ছায়ায় থাকতে পারি, আর এর থেকে ফল খেতে পারি, আর এ গাছকে যে পানি দিয়ে সেচ দেয়া হয়েছে ওই পানি পান করতে পারি। তখন আল্লাহ (সুব) তাকে গাছের নিচে যাবার অনুমতি দিবেন। 

তারপর আল্লাহ (সুব) তাকে আরেকটি গাছ দ্বারা প্রলুব্ধ করবেন, যা এর চেয়েও বড় এবং দেখতেও অনেক সুন্দর। এই গাছ দেখেও ব্যক্তিটি আল্লাহকে বলবে, ‘ও আল্লাহ আপনি কি দয়া করে আমাকে এই গাছের নিচে যেতে দিবেন?  তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন, ‘ও আদম সন্তান কি তোমাকে সন্তুষ্ট করবে ? যদি আমি তোমাকে কিছু দেই তাহলে তুমি তার চেয়েও বেশি চাও। ব্যক্তিটি বলবে, ও আল্লাহ আমি আর কিছুই চাই না, ওই গাছই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আপনাকে আর কোন কিছুর জন্যই বলবনা। 

তখন আল্লাহ (সুব) তাকে ঐখানে যাবার অনুমতি দিবেন এবং লোকটি ওই গাছের নিচে যাবে। এরপর লোকটি আরও বড় একটা গাছ দেখতে পাবে, যখনই সে এরকম গাছ দেখতে পাবে তখনই সে বলবে, ‘ও আল্লাহ দয়া করে আমাকে ওই গাছের নিচে যেতে দিন? তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন, ‘তুমি কি আমাকে বলনি যে তুমি আর কিছু চাইবে না? ও আদম সন্তান তুমি কিসে সন্তুষ্ট হবে? ব্যক্তিটি বলবে ও আল্লাহ, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আর কিছুই চাইবো না। শুধুমাত্র ওই গাছটার নিচে যেতে চাই। 

আল্লাহ (সুব) তাকে ওই গাছের নিচে যাবার অনুমতি দিবেন।

ধীরে ধীরে গাছ আরও বড় ও সুন্দর হচ্ছে কারন আমরা  ধীরে ধীরে জান্নাতের দিকে যাচ্ছি এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এর কারণ হচ্ছে, জাহান্নাম পরিবেশের জন্য দুর্যোগের মত, আমরা আগেই বলেছি, যদি  এক ফোটা যাক্কুম পৃথিবীতে পড়ে তাহলে পৃথিবীতে মহামারী ঘটবে। 

রসুলুল্লাহ (সঃ) বলছেন,যদি যক্কুমের একফোটা এই পৃথিবীতে পড়ে তাহলে এই ফোটা পৃথিবীর সকল কিছুকেই বিষাক্ত করে ফেলবে। 

তাই বলা যায় জাহান্নামের কাছাকাছি এই পতিত জমি জাহান্নামের কারনে একেবারেই অনুর্বর।  কিন্তু এখন আমরা জান্নাতের কাছাকাছি যাচ্ছি, তাই গাছও বড় এবং সুন্দর হচ্ছে। 

তো যখন লোকটি আরও বড় গাছের নিচে যাবে, সে কি দেখতে পাবে? সে তার চোখের সামনে জান্নাতের দরজা দেখতে পাবে। কিছু দুরেই সে জান্নাতের গেট দেখতে পাবে। এখন কোনভাবেই সে নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। সে বলবে  ‘ও আল্লাহ যদিও আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, তারপরও দয়া করে আমাকে জান্নাতের দেয়ালের নিচে বসার অনুমতি দাও। আমি জান্নাতে যেতে চাইনা আমি শুধুমাত্র জান্নাতের দরজার কাছাকাছি থাকতে চাই। তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন, ও আদম সন্তান তুমি বার বার আমার কাছে চাচ্ছ আর প্রতিজ্ঞা করছো, যে তুমি আর কিছু চাইবে না, আর আমি বার বার তোমাকে দিয়েই যাচ্ছি, তুমি কি আর কিছু চাও? লোকটি বলবে ও আল্লাহ আমি আর কিছু চাই না, এটাই আমার শেষ চাওয়া। আমাকে শুধু জান্নাতের দরজার নিচে থাকতে দাও। এখন লোকটি জান্নাতের দেয়ালের নিচে থাকতে যাবে। যখন সে সেখানে যাবে তখন সে জান্নাতের লোকদের কথার আওয়াজ শুনতে পাবে, সে জান্নাতিদের হাসি, কথাবার্তা শুনবে এবং সে মনে মনে হিংসা অনুভব করবে। সে জান্নাতের আনন্দের এ শব্দ শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারবে না, তখন সে বলবে, ও আল্লাহ আমাকে শুধু গেটের ভিতরে ঢুকতে দাও। 

আল্লাহ (সুব) বলবেন, হে আদম সন্তান, তোমাকে কিসে আনন্দ দিবে ? যদি আমি তোমাকে সম্পুর্ণ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সব সম্পদ দেই তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? এই লোকটি প্রত্যেকবারই আরও বেশি আরো বেশি চাচ্ছে। তাই আল্লাহ (সুব) বলছেন আমি যদি তোমাকে এই পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সম্পুর্ণ তোমাকে জান্নাতের মধ্যে দেই তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে ও আল্লাহ হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হব। তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন আমি তোমাকে এটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, আল্লাহ একে বার বার গুন করবেন যতক্ষন না পর্যন্ত আল্লাহ (সুব) পৃথিবী এ এর মধ্যে যা আছে তাকে ৫ বার গুন না করবেন। লোকটি আল্লাহ (সুব) কে বলবে, ও আল্লাহ ও আল্লাহ যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, আমি সন্তুষ্ট, আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ (সুব) বলতেই থাকবেন, আর লোকটি বলতে থাকবে ও আল্লাহ এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট, ও আল্লাহ এতটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ (সুব) বলবেন আমি একে আরও ১০ গুন করব, তারপর এর বাইরেও আমি তোমাকে দিব যা তোমার চোখকে আনন্দিত করবে আর তোমার মনকে সন্তুষ্ট করবে। 

(এটাই হচ্ছে জান্নাতের সর্বনিম্ন স্তর।) পৃথিবী ও এর মধ্যে যা আছে তার ১০ গুন এবং এরপর তোমার জন্য এর বাইরেও চাওয়ার দরজা উন্মুক্ত করা হবে তুমি যা চাও চাইতে পারবা, এবং আমি তোমাকে তাই দিব যা তোমার চোখকে আনন্দিত করবে মনকে সন্তুষ্ট করবে। এটাই হচ্ছে জান্নাতের সর্বনিম্ন স্তর, যা এমন একজন মানুষের জন্য, যে পাপ করেছে, জাহান্নামে বছরের পর বছর আযাব ভোগ করেছে, আল্লাহ (সুব) তাকে পুরো পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে তার ১০ গুন দিবেন। এটাই হচ্ছে জান্নাতের সর্বনিম্ন স্তর। 

তাহলে সর্বোচ্চ স্তরের কি অবস্থা?

জান্নাতের লোকদের সংখ্যা পিরামিডের মত হবে, সর্বনিম্ন পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি লোক থাকবে, তারপর ধীরে ধীরে সংখ্যা কমতে থাকবে, সংখ্যা কমতে থাকবে, যতক্ষন না পর্যন্ত আমরা পিরামিডের চুড়ায় যাব, পিরামিডের চুড়ায় কতজন থাকবে? সর্বোচ্চ চুড়ায় থাকবে শুধুমাত্র ১ জন । তাই আপনি জান্নাতের সবচেয়ে নিচের স্তরে অনেক অনেক লোক দেখতে পাবেন, এরপর আরও কিছু কমবে, তার পর আরও কমবে, তারপর আরও কমবে, যতক্ষন না আপনি সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে পারবেন ততক্ষন কমতেই থাকবে। এর উপরে আর কিছুই নেই, আর এই সর্বোচ্চ চুড়াটা  শুধুমাত্র কেবল একজনের জন্যই সংরক্ষিত।

 রসুলুল্লাহ (সঃ) সহীহ মুসলিমে বলেছেন, আজান শুনার পরে যে ব্যক্তি বলবে, ও আল্লাহ , এই পরিপুর্ণ আহবান এবং এই নামাজের প্রভু, দয়া করে মুহাম্মদ (সঃ) কে শাফায়াতের অধিকার দাও, আধিপত্য দাও এবং তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত কর যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে দিয়েছ। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যদি তুমি আল্লাহর কাছে আমাকে এ স্তরে নেওয়ার প্রার্থনা কর, তাহলে আমি তোমার জন্য বিচার দিবসে শাফায়াত করব, যদি প্রত্যেক আজানের পর আপনি রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য দুয়া করেন, তাহলে রসুলুল্লাহ (সঃ) কিয়ামতের দিন শাফায়াতের মাধ্যমে দুয়ার পুরস্কার দিবেন। 

তাই আযানের পরে যে দুয়া পড়তে হয় তা মুখস্ত করে নিন, 

জান্নাতের এই সর্বোচ্চ স্তরের নাম হচ্ছে আল ওয়াসিলা। তাই আল্লাহ (সুব) এর কাছে রসুলুল্লাহ (সঃ) কে আল ওয়াসিলা দেয়ার জন্য দুয়া করুন, আল ওয়াসিলা হচ্ছে জান্নাতের এমন একটি স্থান যাকে আল্লাহ (সুব) বিশেষ যত্ন সহকারে রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য তৈরি করেছেন। এ স্তরটি রসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্যই সংরক্ষিত। আল্লাহ (সুব) তার জন্য এ স্থানটি সংরক্ষন করেছেন এবং এটাই হচ্ছে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। যার উপরে আল্লাহর আরশ ছাড়া আর কিছুই নেই।আল ওয়াসিলার উপরে আছে আল্লাহ (সুব) এর আরশ। অতএব রসুলুল্লাহ (সঃ), আমাদের  সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ (সুব) এর সবচেয়ে নিকটে থাকবেন। এটাই হচ্ছে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। 

এরপর আপনি আরও কিছু লোক দেখতে পাবেন যারা অন্যান্য উচ্চ স্তরে থাকবে। স্পষ্টত রসুলুল্লাহ (সঃ) সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকবেন, এরপর আল্লাহর আম্বিয়াগন এরপর অন্যান্যরা থাকবেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, শহীদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি ভাল?,রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন, তারা হল ওই সকল লোক যারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধের জন্য যায় ,এবং কোন সময়ই পেছন ফিরে তাকায় না। তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের মুখকে ফিরিয়ে নেয় না। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যখন তারা মারা যায় তখন আল্লাহ (সুব) তাদের জন্য সন্তুষ্টির হাসি হাসেন। এবং রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যদি আল্লাহ কারও উপর এরকম সন্তুষ্টির হাসি হাসেন তাহলে ওই লোককে হিসাবের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। 
রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন তারা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করবে। রসুলুল্লাহ (সঃ) আরও বলেছেন যে ব্যক্তি এতিমদেরকে দেখাশুনা করবে, সে আত্মীয় হোক বা না হোক, আমি এবং সে জান্নাতে পাশাপাশি থাকবো। 

তো আপনি যদি এতিমদের দেখাশুনা করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনি জান্নাতে রসুলুল্লাহ (সঃ) এর প্রতিবেশি হবেন। 

এবং জান্নাতে এমন কিছু লোক থাকবে যারা নিজেদের আমলের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌছতে পারবে, তারপর তারা দেখবে যে তাদেরকে আরও ভাল স্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তারা জিজ্ঞেস করবে কেন আমাদেরকে উচু স্তরে নেওয়া হচ্ছে, আমাদের আমল আমাদেরকে এই স্তর পর্যন্ত এনেছে, কিভাবে আমাদেরকে এখন উচু স্তরে আনা হচ্ছে। তখন তাদেরকে বলা হবে,  কারণ তোমাদের সন্তানরা তোমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল।

তাই যদি আপনি আপনার পিতার প্রতি দায়িত্ববান হতে চান তাহলে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, এবং এটা জান্নাতে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবে। আপনি আপনার সন্তানকে এই দুয়া শিক্ষা দিন এবং তাকে আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন, কারন আপনি জান্নাতের একটি নির্দিষ্ট স্তরে থাকবেন এই দুয়ার কারণে হঠাৎ করে একটি লিফটের মত কিছু এসে জান্নাতে আপনার স্তর বাড়িয়ে দিবে।

সল্লাল্লাহু আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মদ, ওয়াআলা আলিহি ওয়াসাবিহি ওসাল্লাম তাস্লিমান কাসিরান