মুহাম্মদ (সাঃ) নবুওতপ্রাপ্তি ও খাদিজার ভাই ওয়ারাকা

ওয়ারাকা বিন নওফেল খাদিজার চাচাতো ভাই; জাহেলিয়াত-আমলে ওয়ারাকা খৃস্টধর্ম অবলম্বন করেছিলেন এবং ইবরানিভাষা পড়তে ও লিখতে শিখেছিলেন; একসময় তিনি ইবরানি ভাষায় কিতাব লিখতেন। মুহাম্মদ (সাঃ) যখন ধ্যানস্থ হেরা-গুহায় জিবরাঈলের দেখা পেয়ে এবং ওহিপ্রদানসঞ্জাত আপাত ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে স্ত্রী খাদিজার কাছে এসে নিজের ভয় ও অস্থিরতা প্রকাশ করলেন, তখন খাদিজার সব শুনে এই চাচাতো ভাই ওয়ারাকার কথাই মনে হলো। তিনি নবীজিকে শান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন, তাঁর ভয়ের কোনো কারণ নেই; এবং তিনি মনে মনে স্থির করলেন, মুহাম্মদকে (সাঃ) নিয়ে তিনি ওয়ারাকার কাছে যাবেন।

খাদিজা নবী মুহাম্মদকে স্বীয় চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন; কিন্তু যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে সময় তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা তাঁকে বললেন, ‘ভাইজান, আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তিনি কী যেন সব কথাবার্তা বলছেন এবং অস্থির হয়ে পড়ছেন।’

ওয়ারাকা বললেন, ‘ভাতিজা, বলো তো তুমি কী দেখেছ? কী হয়েছে তোমার? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং হেরা-গুহায় যেভাবে যা ঘটেছিলো সবকিছু সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।

আনুপূর্বিক সব কিছু শ্রবণের পর বিস্ময়-বিহবল কণ্ঠে ওয়ারাকা বলে উঠলেন, ‘ইনিই তো সেই মানুষ, যিনি মুসা আলাইহিস সালামের নিকটেও আগমন করেছিলেন…

তারপর বলতে থাকলেন, ‘হায় হায়, যেদিন আপনার স্বজাতি এবং স্বগোত্রীয় লোকেরা আপনার উপর নানাভাবে জুলম-অত্যাচার করবে এবং আপনাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে, সেদিন যদি আমি শক্তিমান এবং জীবিত থাকতাম…’

ওয়ারাকার মুখ থেকে এ কথা শ্রবণের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বলছেন?—ওরা আমাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে?’

ওয়ারাকা বললেন, ‘হ্যাঁ, তারা অবশ্যই আপনাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে।’ তিনি আরও বললেন ‘শুধু আপনার কথাই নয়, অতীতে এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে। যখনই জনসমাজে সত্যের বার্তবাহক কোনো সাধক পুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে, তখনই তার স্বগোত্রীয় লোকেরা নানাভাবে তার উপর জুলম, নির্যাতন চালিয়েছে এবং তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে।’ তিনি আরও বললেন, ‘মনে রাখুন, আমি যদি সেই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি, তাহলে সর্ব প্রকারে আপনাকে সাহায্য করবো।’ কিন্তু এর অল্পকাল পরেই ওয়ারাকা মৃত্যুমুখে পতিত হন।